Spread the love

এসভি ডেস্ক: মহামারি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে সদ্য পদত্যাগকৃত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। শুক্রবার (২৪ জুলাই) অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ই-মেইল এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠান। 

শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

নোটিশে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আইনি নোটিশে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট দেখে এটাই প্রমাণিত যে, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এত চরমে পৌঁছেছে। অধিকাংশ কোভিড-১৯ হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এসব দুর্নীতি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজির আর্শিবাদপুষ্টদের কাছে করোনা যেন আশির্বাদরূপে আবির্ভাব হয়েছে। এর দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পদত্যাগকারী সাবেক ডিজি এড়াতে পারেন না।

নোটিশে বলা হয়, করোনা মহামারির এই সংকটকালে পুরো জাতি যখন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন সরকারি হিসাব মতেই দৈনিক প্রায় ৪০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন তখন স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল। স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতাহীন দুর্নীতির দায় অবশ্যই সদ্য পদত্যাগকারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে বহন করতে হবে। জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা ও রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি স্বাক্ষরের দায় অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নিতে হবে।

নোটিশে আরও বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকেই রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স অবৈধ জানা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কীভাবে চুক্তি করল? ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে আমরা মিডিয়াতে দেখতে পেড়েছি। এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিত থাকার প্রটোকল নেই।

তাই আইনি নোটিশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম ও প্রতারক শাহেদকে অবৈধ সুযোগ প্রদানের দায়ে সদ্য পদত্যাগকারী স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি আবুল কালামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান পূর্বক ফৌজদারি কার্যবিধির সুনির্দিষ্ট বিধান মতে নোটিশ গ্রহীতা কর্তৃক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার অনুরোধ করছি। অন্যথায় জনস্বার্থে যথাযথ নির্দেশনা চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, ডিজি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে গত ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন ডা. আজাদ। 

গেল মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে চিকিৎসা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন ডা. আজাদ। এন৯৫ মাস্কের মোড়কে বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। 

সম্প্রতি করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের কেলেঙ্কারিতেও স্বাস্থ্যের এই ডিজিকে জড়িয়ে আলোচনা শুরু হয়। সরকার রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কোভিড-১৯ চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এছাড়া রোগীদের নমুনা পরীক্ষা না করে রিপোর্ট দেয়ার বিষয়টি নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়।

এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। এরপরই স্বাস্থ্যের ডিজিকে চিঠি দিয়ে এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। 

ওই চিঠির জবাবে আবুল কালাম আজাদ জানান, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম এ বিষয়ে অধিদফতরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *