জাহঙ্গিীর সরদার: সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত হচ্ছে মিঠাপানির শুঁটকি। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এসব শুঁটকি রফতানি হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামেও যাচ্ছে এ অঞ্চলের শুঁটকি। ফলে একদিকে যেমন শুঁটকির মাছ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন মাছ চাষীরা অন্যদিকে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ এই কাজের সাথে জড়িতরা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় বলেন, গত সাত বছর ধরে মাছের শুঁটকি তৈরি করছি। সাধারণত সিলভার কার্প, পুঁটি, বাইন মাছ আড়ৎ থেকে কিনে এনে খামারে শুকিয়ে শুটকি তৈরী করছি।
তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে প্রায় আট হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করি।এসব শুঁটকি চট্রগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করা হয়। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি দর সাধারণত ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে শুঁটকি মাছের আড়ৎ বানিয়েছি। প্রতি মাসে চার হাজার কেজির মতো শুঁটকি তৈরী করছি। এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, মিঠা পানির মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরা খুবই সম্ভাবনাময় একটি জেলা। কারণ এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ উৎপাদিত হয়। এসব মাছের শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
শুটকি কামারে কর্মরত একাধিক নারী শ্রমিক বলেন, আগে আমরা বাড়িতে থাকতাম। কেন কাজ করতাম না। এই খামার তৈরী হবার পরে এখানে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরীতে কাজ শুরু করেছি। তাছাড়া তিনবেলা খাবারও দেওয়া হয় খামার থেকে। এখানে এই শুটকি খামার তৈরী হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি।
সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি মাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করি। আমাদের দেশের লোকজন সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি খায়। তাই উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। আর পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুঁটি মাছের শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। আমি পশ্চিমবঙ্গে পুটি মাছের শুঁটকি রপ্তানি করি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, মিঠাপানির শুঁটকি মাছ উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। বছরে প্রায় দুই লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে এখানের শুটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বছরে একটি সময় ঘেরে ধান চাষ করার জন্য খুবই কম মুল্যে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। এসময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে জেলায় কি পরিমাণ শুঁটকি মাছ উৎপন্ন হয় তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারবে। এছাড়া এই প্রকল্পের উন্নয়নে খুব শীঘ্রই খামারীদের নিয়ে বসবো এবং পরামর্শ প্রদান করবো।