Spread the love

এসভি ডেস্ক: গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে, সাংবাদিক ছাটাইয়ের পায়তারা রুখে দাঁড়াতে ও নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ কার্যকরের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সাংবাদিকদের বকেয়া পাওনা অবিলম্বে পরিশোধ, ছাঁটাইকৃতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা। 

শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার এলাকায় গণমাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে, সাংবাদিক ছাটাইয়ের পায়তারা রুখে দাঁড়াতে ও নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ কার্যকরের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান ডিইউজের নেতৃবৃন্দ। 

বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আমাদেরকে আইনগতভাবে অগ্রসর হতে হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়কে বলতে চাই ডিএফপি ঘোরাও সফল করতে হবে। দেশে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সাত দিনের মাথায় কোন গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের কাছে গিয়ে বলল টাকা নাই, টাকা দিতে হবে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলো। আমরা ইউনিয়ন থেকে কোনো বিরোধিতা করিনি। তারা টাকা উঠিয়ে বিলাসবহুল ভবন করছে। অথচ সংবাদকর্মীদের বেতন দিচ্ছে না। অনেক হাউজ গত এপ্রিল মাসের বেতন দেয় নাই। মে মাসের বেতন দেয়নি, গেল ঈদের বোনাস পর্যন্ত দেয়নি। সামনে আরেকটি ঈদ এবং বেতন-বোনাসের প্রশ্ন আছে। এই বিষয়গুলি লিখিতভাবে আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে চাই এবং করতে হবে। তাহলে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করা সম্ভব।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, গণমাধ্যম চালাতে গেলে অবশ্যই নীতিমালা মানতে হবে। সংবাদপত্র চলে তার নিজস্ব নীতিমালা অনুসারে। সংবাদপত্র হোক টেলিভিশন হোক নিয়োগ দিবেন নীতিমালা অনুযায়ী কিন্তু বেতন দেওয়ার সময় নীতিমালা মানবেন না তা হবে না। নীতিমালার বাইরে গিয়ে সাংবাদিক ছাঁটাই করবেন এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফিউজে) মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমে ছাটাই চলবে না। করোনাকালে অনেক গণমাধ্যম নীতিবহির্ভূত কর্মী ছাঁটাই করেছে তা কখনোই কাম্য নয়। বকেয়া বেতন কর্মী ছাঁটাই সহ সকল দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা আজকে বিক্ষোভ সমাবেশে হাজির হয়েছি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, আমরা বাংলাদেশের আজকে একটি অগ্রসরমান পত্রিকার সামনে দাঁড়িয়েছি। আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই আমি নিজেও বদলে দিতে চাই; কিন্তু পেছনের পথে নয় আমি অগ্রসর হতে চাই যেখানে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে বার্তা আমরা পৌঁছে দিতে পারি। আমরা অবশ্যই বদলে যেতে চাই তবে সেটা ষড়যন্ত্রের পথে নয়, আমরা পৌঁছে দিতে চাই যেখানে গণমানুষের বার্তা পৌঁছে দিতে পারে, আমরা সুবার্তা দিতে চাই আধুনিক জীবন জিজ্ঞাসার জবাব যেখানে মিলতে পারে কিন্তু আমরা বিপদে পরিচালিত হতে চাইনা, ষড়যন্ত্রের পথে পরিচালিত হতে চাইনা। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের আইন যদি মানতে হয় তাহলে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করবেন না, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মানুষের উপরে জুলুম করবেন না। যদি মানুষের পাশে থাকতে চান, যদি সমাজকে পাল্টাতে চান যদি অগ্রসর হতে চান তাহলে সংবাদপত্রে নৈরাজ্য তৈরি করবেন না। আপনারা সরকারের বিজ্ঞাপন লুটে নিচ্ছেন, বেসরকারি বিজ্ঞাপন নিচ্ছেন কিন্তু আপনি কি করছেন? করোনা কালের যে দুর্যোগ সেই দুর্যোগে আপনি খলনায়কের চরিত্রে আবির্ভূত হয়ে কাউকে কাউকে সুবিধা দিয়ে আপনার পত্রিকা অফিসে দালাল চক্র তৈরি করে সেই সমস্ত ছাঁটাই তালিকা তৈরি করছেন। কেন করছেন? কি কারণে করছেন? প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে…? নিশ্চয়ই নয়। 

সাজ্জাদ আলম খান তপু আরও বলেন, আপনি কাকে বিতাড়িত করতে যাচ্ছেন? সেই দক্ষ মানুষটিকে? যে ২০ বছর পরিশ্রম করে আপনার পত্রিকার হাল ধরে আছেন তাকে? যিনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ, যিনি গণমানুষের কথা বলতে পারবেন, একটি সুস্থ ধারার সম্পাদনা করতে পারবেন তার গলায় আপনি ছুরি চালাতে চাচ্ছেন, কেন চাচ্ছেন? যে পত্রিকার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেই পত্রিকায় একটি সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছিল। তিনি নির্দ্বিধায় বলেছিলেন এই কারণে যে দুর্যোগ এই দুর্যোগে আমি কাউকে ছাঁটাই করব না। তিনি বলেছিলেন, আমি তো এতোকাল মুনাফা করেছি এই দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সাথেই থাকতে চাই। আবারো আমার এই প্রতিষ্ঠানটি স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখাবে, আমরা কাউকে হতাশ করতে চাইনা, আমি কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার পরে সবাইকে নিয়ে আবারও মুনাফার মুখ দেখতে চাই। আপনারা সেই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছিলেন- কিন্তু আপনারা আজ কি করছেন? ছুরি হাতে নিয়ে বসে আছেন। 

ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক বলেন, সুশীল সমাজের কথা বলবেন, মানুষের কথা বলবেন, মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলবেন, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেষ্টা করবেন; কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠান যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে মানুষকে বিদায় করবেন তা হতে দেবো না। আলোকিত বাংলাদেশের ট্রাস্টের মালিকানাধীন পত্রিকা ব্যক্তি মুনাফা পৌঁছানোর কথা নয় সেখানেও দেখলাম করোনার প্রথম সুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করলেন, বেতন দিতে চাইলেন না, ছাঁটাই করলেন বাড়ি ঘেরাও হলো বাধ্য হলেন সেই টাকাও দিতে। 

মানবকণ্ঠ আমরা দেখলাম ঈদের আগে ছাটাই করে দেয়া হলো। বাংলাদেশের খবর সেখানেও আন্দোলন চলছে সেখানেও আমরা সফল হব। আমরা দেখি টেলিভিশনে আমার বন্ধু ১২ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করছেন কিন্তু অন্যদিকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ দেখি ৩ লাখ টাকায় বেতন নিচ্ছেন কিন্তু ছাঁটাইয়ের সময় দেখি আমার ওই ১২ হাজার টাকার বন্ধুটিকে ছাটাই করা হচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বেতন-বৈষম্যের প্রতিষ্ঠান অন্য কোথাও নেই। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে কোম্পানি আইন সে কোম্পানি আইনে যদি বেতন ধরি সেই কোম্পানি আইনেও বেতন দেয়া হচ্ছে না। রাতদিন যেখান থেকে জ্ঞান বিতরণ করা হয় সেখানকার চিত্র আরো নৈরাশ্যজনক, নিরাশার, হতাশার। এই হতাশা থেকে মুক্তির পথ কি হতে পারে? মুক্তির একটি পথ সেটি হচ্ছে লড়াই। আমরা জানি বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে মধ্যম পর্যায়ে দালালদের সুড়, আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন আর যদি পত্রিকা প্রকাশ না হতো তাহলে কাজ করতেন কোথায় ওই সমস্ত দালালদেরকে আমরা সতর্ক করে দিতে চাই, দালাল ছাড়া পত্রিকায় কাজ করেন তাদেরকে ধিক্কার জানান আপনারা নিজেদের অধিকার রক্ষার্থে আন্দোলন করুন। 

সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, সবচেয়ে করুণ অবস্থা দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অনলাইন গুলোর, কিছু কিছু অনলাইন মানুষের চরিত্রহননের চেষ্টায় চালাচ্ছেন। তাদেরকে সতর্ক করতে চাই আর কিছু কিছু অনলাইন একটি ল্যাপটপ দিয়ে সম্পাদক সাজার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকতে হবে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল যদি আপনি বাস্তবায়ন করতে চান তাহলে বলতে চাই ওয়েজ বোর্ড অনুসারে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে। এই করোনা মহামারীর সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন আমরা সেই পথ রুদ্ধ করতে চাই৷ বন্ধ করে দিতে চাই। তাই আমরা সরকারকে বলছি মালিকপক্ষকে ডাকুন লাগাম টেনে ধরে বলুন ‘ক্ষুধার্ত মানুষের ছাঁটাই চলবে না।’

সরকারে যারা রয়েছেন, আমাদের অভিভাবক সংগঠন বিএফইউজে যারা রয়েছেন, নেতৃবৃন্দ যারা রয়েছেন তারা আসুন- আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্যোগকালীন সময়ে শ্রমিক ছাঁটাই চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে, সাংবাদিক সেটাই চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে, কাউকে ছাঁটাই করা যাবে না। সেই ছাঁটাইয়ের আন্দোলন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলে সেটা নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যেতে পারে। গণমানুষের কথা যদি বলতে চান তাহলে অস্থিরতা বন্ধ করুন, নৈরাজ্য বন্ধ করুন, মানুষের বিরুদ্ধে গুজব প্রতিরোধে যদি লড়াই করতে চান তাহলে গণমাধ্যম সচল রাখুন। লড়াকু সাংবাদিকদের জয় হবেই।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলমের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, বিএফইউজের কোষাধক্ষ্য দীপ আজাদ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এম জিহাদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আসাদুর জামান আসাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *