এসভি ডেস্ক: সুনামগঞ্জে বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ। কোথাও পা ফেলার শুকনো জায়গা নেই। ভিটে বাড়িতেও ঢুকে পড়ছে পানি। যেদিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। জেলার প্রতিটি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
কিন্তু ঘরে নিজেদেরই খাবার নেই। নেই নিজেদের থাকার জায়গা। তাই নিজেরা যেখানে থাকছেন সেখানেই গরু-ছাগলসহ গবাদি পশুকে রাখতে হচ্ছে। গত রাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর এলাকায় এক গৃহিনী তার পালিত কয়েকটি ছাগলকে নিয়ে একটি ঘরে রাত কাটিয়েছেন। ছাগলের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গবাদি পশু থাকার ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছে খামারিরা।
রবিবার (২৮ জুন) ষোলঘর পয়েন্টে দুপুর পর্যন্ত পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাক ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম পানিবন্দি না শুধু শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এ খবর জানিয়েছেন ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আব্দুল মমিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় খামারিদের মাছ ভেসে গেছে। প্রতিটি হাট-বাজারে পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। সওদাপাতি নেই কারো ঘরে। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। আবার কেউ স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকের ঘরে জ্বলছে না চুলা। ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি তেমন। বন্যার দুর্ভোগ অপরদিকে করোনার হানা। সব মিলিয়ে ভালো নেই হাওর পাড়ের মানুষ। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার গৌরারং ও মোহনপুর ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এ দুটি ইউনিয়নে ২০/২৫টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। লালপুর গ্রামের দারু মিয়ার ১০/১২টি পুকুরের মাছ ও বাণীপুর গ্রামের তৈয়বুর রহমানসহ কয়েকজন বন্ধুর ৮টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় আর্থিক লোকসানে পড়েছেন তারা।
এদিকে সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের পুকুরের চাষ করা ৭০ লাখ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। এমন চিত্র জেলার সবক’টি উপজেলার।
রাধানগর গ্রামের মাজেদা বেগম নামে এক নারীর ঘরে পানি ঢুকে গত ২দিন ধরে চুলায় জ্বলছে না আগুন। চিড়া আর গুড় খেয়ে কোন মতে দিনযাপন করছেন। এমন অসহনীয় অবস্থা জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কম বেশি রয়েছে। জেলা শহরের সাথে ৫টি উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বন্যার পানির বেগে ভেঙে গেছে সংযোগ সড়ক। সুনামগঞ্জ শহরের মধ্য বাজার এলাকায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে লোকজন। তাছাড়া শহরের এমন কোন পাড়া নেই যেখানে পানিবন্দি নেই।
উপজেলার বাণীপুর গ্রামের আমিনুর রশিদ জানান, আমি ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোহনপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছি। অবস্থা এমন ভয়াবহ যে, প্রায় ২শতাধিক মানুষের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যার পানি না কমলে দুর্গতরা কোথায় দাঁড়াবে। এ নিয়ে হতাশা আর শঙ্কায় দিনরাত কাটছে মানুষের।
এদিকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। তাদের সহায়তায় এখন কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
বন্যার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বন্যার পানি বাড়ছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্র্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যানকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।