Spread the love

এসভি ডেস্ক: ইছামতি নদীর কোল ঘেষে সুন্দরবনের আদলে গড়ে ওঠা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি ব্যবহার করে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত ম্যানেজার দিপঙ্কর ঘোষের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের যৌথ তত্বাবধানে ওই কেন্দ্রটির কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কয়েক বছর যাবৎ পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কিত কমিটির সুনির্দিষ্ট কোন কার্যক্রম, নজরদারি ও তদারকি না থাকার সুযোগে ম্যানেজার দিপঙ্করের দুর্নীতি ও অনিয়ম ক্রমশ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর জণপ্রশাসন পদকে ভ’ষিত হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দর্শনীয় এই পর্যটন কেন্দ্র। এরপর ওই কেন্দ্রটির উন্নয়নে ডজনখানেক মেগা প্রকল্পের জন্য বিশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। তবে সরকারের এসকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সাঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, হরিলুট ও অর্থলোপাটের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটিকে ক্রমশ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন দায়িত্বরত ম্যানেজার দিপঙ্কর ঘোষ।

আরো জানা যায়, বহু প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে ২০১০-১১ অর্থবছরে দেবহাটা উপজেলার শিবনগরে ইছামতি নদীর ভাঙন কবলিত নোম্যান্স ল্যান্ড রক্ষা, জীববৈচিত্রের অভয়ারণ্য ও বিনোদন কেন্দ্র সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারী চরভরাটি কয়েকশ বিঘা সম্পত্তিতে গড়ে তোলা হয় এই পর্যটন কেন্দ্রটি। বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে প্রায় একুশ বিঘা জমির একটি লেক ও আশপাশে রয়েছে আরো কয়েকটি মৎস্য চাষ যোগ্য মাঝারি ও বড় আকারের বির্স্তীর্ণ ঘের। বনাঞ্চল সৃষ্টির পর লেকসহ মৎস্য ঘেরগুলি উন্মুক্ত ছিল। তখন মাছ চাষের যাবতীয় টাকা পর্যটন কেন্দ্রটির আয় হিসেবে ধরা হতো। ২০১৭-১৮ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ-আল-আসাদ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের দেখাশুনার দেন দেবহাটা কলেজ সংলগ্ন মৃত তারাদাশ ঘোষের ছেলে দিপঙ্কর ঘোষকে। এরপর নানামুখী দূর্নীতি ও অনিয়ম শুরু করে দিপঙ্কর ঘোষ। ২০১৮-১৯ সালে উন্মুক্ত থাকা স্বত্তে¡ও পর্যটন কেন্দ্রের ২১ বিঘা বিস্তৃত অনামিনা লেকটি ইজারা ছাড়াই মৎস্য ঘের হিসেবে মাছ চাষ শুরু করেন দিপঙ্কর ঘোষ। বছর জুড়ে বাগদা ও গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ ও বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকার কানাকড়িও তিনি জমা দেননি পর্যটন কেন্দ্রের আয়ের খাতে।

এছাড়া গত বছর ম্যানগ্রোভের ভিতরে থাকা অন্যান্য বড় ও মাঝারি ঘেরগুলো উপজেলা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ব্যক্তি সম্পত্তির মতো স্থানীয় ওহাব আলী, রেজাউল ইসলাম, হবিবর, মনি, উত্তমসহ আরো অনেকের কাছে ইজারা দিয়েও তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকা। উন্মুক্ত থাকাবস্থায় ভেটকি ও চিংড়ি মাছের রেনুপোনা থেকে শুরু করে চাষকৃত বাগদা, গলদা চিংড়ী মাছ ও কাঁকড়া সব কিছুই খেয়াল খুশি মতো বিক্রি করেছেন ম্যানেজার দিপঙ্কর। মুলত বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছ পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন সজল নামের এক ব্যবসায়ী এবং ভেটকিসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ এবং কাঁকড়া পারুলিয়া মৎস্য সেড এবং আশপাশের কাঁকড়ার ঘরে বিক্রি করতেন দিপঙ্কর।

পর্যটন কেন্দ্রটি ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হওয়া এবং সেখানে চলমান দুর্নীতি-অনিয়ম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী বলেন, পর্যটন কেন্দ্রটি শুধুমাত্র সদর ইউনিয়ন বা দেবহাটা উপজেলা নয় বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার একটি সম্পদ। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো দেবহাটাবাসীর যে আশা ও স্বপ্ন নিয়ে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিলো সেটি আদৌ বাস্তবায়ন তো হয়নি, পাশাপাশি একক আধিপত্যের কারণে ক্রমশ পর্যটন কেন্দ্রটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। আমিসহ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহাদয়কে প্রধান করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তসহ কয়েকজনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হলেও বিগত ৫-৬ বছরের মধ্যে সেই কমিটির কোন কার্যক্রম নজরে আসেনি। কোন মিটিং হয়নি, আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব বা তদরকি সম্পর্কে আমাদের অবহিত এমনকি উপজেলার কোন উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও ম্যানগ্রোভের তত্বাবধানের বিষয় নিয়ে আদৌ আলোচনা করা হয়নি। সেখানকার ইজারা বা আয় ব্যায় সব কিছুই থেকে গেছে আমাদের আড়ালে। যে কারনেই মুলত সেখানে ক্রমশ দুর্নীতি অনিয়ম তীব্র আকার ধারন করেছে। পর্যটন কেন্দ্রটি রক্ষায় গোপন ইজারা পদ্ধতি বাতিল সহ আয় ব্যায় ও অন্যান্য খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুষ্ঠ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের ম্যানেজার দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা কিছু বলা হচ্ছে সেগুলো সত্য না। ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র যা কিছু হচ্ছে সবকিছু উপজেলা প্রশাসন জানে।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন বলেন, ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে তৎকালীন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে অভিযোগ গুলো এখন জানলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *