Spread the love

এসভি ডেস্ক: সাতক্ষীরার কলারোয়ার দমদম বাজারের উত্তর পাশে অবস্থিত সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগে ১৭ বছরের কষ্টার্জিত ‘মেসার্স রহমান ব্রিকস’ নামীয় ইটভাটাটি ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় দখল করে নিয়েছে পাঁচপোতা গ্রামের জাকের আলী মোড়লের ছেলে বিএনপি সদস্য ফয়জুল্লা হোসেন। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও এখনও কোন প্রতিকার না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন ওই আওয়ামীলীগ নেতা। আর দখল করা ভাটায় নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে বিএনপি সদস্য ফয়জুল্লা হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের দমদম বাজারে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জিএম মিজানুর রহমান স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ‘মেসার্স রহমান ব্রিকস’ নামে ইটভাটা নির্মাণ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করছিলেন। কয়েক মাস আগে আর্থিক সংকটের কারণে কলারোয়ার পাঁচপোতা গ্রামের জাকের আলী মোড়লের ছেলে বিএনপি সদস্য ফয়জুল্লা হোসেন সাথে ৫ বছরের জন্য ৫০% পার্টনার শিপে গত ৫ এপ্রিল নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তি একটি চুক্তি করে মিজানুর রহমান। চুক্তি অনুযায়ী ওই সময় ফয়জুল্লাহ হোসেন ৫ লক্ষ টাকা মিজানুর রহমানকে প্রদান করেন এবং ২০১৯ সালের ২৮ শে ফেব্রয়ারীর মধ্যে বাকি ৪৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু চুক্তি করার পরপরই ফয়জুল্লাহ হোসেন গোপনে মেসার্স দমদম ব্রিকস, প্রোঃ ফয়জুল্লাহ হোসেন বা রহমান ব্রিকস, প্রোঃ ফয়জুল্লাহ হোসেন নামীয় বিভিন্ন ভ’য়া মেমো করে ইট দেওয়ার শর্তে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম প্রায় ১ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় অনেকের জমি নিজ নামে ডিড করে নেন।

এসব বিষয় জানতে পেরে মিজানুর রহমান এসব করার কারণ সম্পর্কে ফয়জ৭ুল্লাহ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে ফয়জুল্লাহ হোসেন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এর পর পাঁচপোতা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে জহর আলী, কওছার আলীর ছেলে আবু সাঈদ, ফারুক হোসেন দামাদর কাটি গ্রামের মফেজউদ্দীনের ছেলে সুমন হোসেন, ইরাদ আলীর ছেলে দাউদ আলীসহ কতিপয় ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও ফয়জুল্লাহর ভগ্নিপতি জামায়াতের অর্থদাতা কওছার আলীর সহযোগীতায় ফয়জুল্লাহ হোসেন ‘রহমান ব্রিকস’ নাম পরিবর্তন করে আমার ইট ভাটার নাম ‘মেসার্স দমদম ব্রিকস’ রাখেন। এমনকি ইটভাটার চিমনিতে কোদাই করে আর বি এফ লেখাটাও নষ্ট করে দমদম ব্রিকস লিখেছেন। মিজানুর রহমান ভাটায় গেলে তাকে খুন জখম করার হুমকিও দিচ্ছেন ফয়জুল্লাহ হোসেন।
আরো জানা যায়, ধূর্ত ফয়জুল্লাহ হোসেন হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ভ’ল বুঝিয়ে গত ৩ অক্টোবর ৪০০৫ নং ক্রমিকে একটি ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন। পরে চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ৭ অক্টোবর ওই ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেন এবং ২৫ অক্টোবর ওই ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার জন্য খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেন।

এ দিকে আরো জানা যায়, মেসাসার্স দমদম ব্রিকস এর নামে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তারপরও ফয়জুল্লাহ হোসেন নিজের নামীয় মেসার্স দমদম ব্রিকসএর নামে কিভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে আর মিজানুর রহমানের দূর্বলতার সুযোগে ভাটাটি কিভাবে দখল করে নিয়েছে, তার ক্ষমতার জোর কোথায়? এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।
সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভাটার প্রকৃত মালিক জিএম মিজানুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমি সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছি। অবৈধ টাকার প্রভাবে ফয়জুল্লাহ হোসেন বাড়াটে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় আমাকে নিঃস্ব করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে তিলে তিলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখল হয়ে গেলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকবে না। এ ব্যাপারে আমি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও এখনও কোন দৃশ্যমান সমাধান পাইনি। ফয়জুল্লাহ আমার দূর্বলতার সুযোগে আমার ভাটাটি দখল করে রেখেছে।

তবে কেন ভাটা দখল করে নিয়েছে আর কেন প্রকৃত মালিক মিজানুর রহমানকে ইটভাটায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্ন করা হলে ফয়জুল্লাহ হোসেন বলেন, আমি কারো ইটভাটা দখল করিনি।

এ ব্যাপারে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেসার্স দমদম ব্রিকস এর নামে কোন লাইসেন্স বা বৈধ কাগজ পত্র নেই। ওই ভাটাটি আগের ট্রেডেই আছে। তবে অংশিদারিত্বের ব্যাপারে দুজনের মাঝে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তবে তার সমাধান হয়ে গেছে।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর এম সেলিম শাহ-নেওয়াজ বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর একটি অভিযোগ হয়েছে। ব্যাপার এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। আর বিষয়টি মালিকানা সংক্রান্ত ব্যাপার হওয়ায় আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে।

কলারোয়া তানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহমেদ বলেন, এ সংক্রান্ত ব্যাপারে একটি অভিযোগ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পেয়েছি। দুই পক্ষকে নোটিশ করে, তাদেরকে নিয়ে বসে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবো। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই বিষয়টির সমাধান দেবেন।