Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি সন্তান সম্ভবা নারীকে বিশেষ ব্যবস্থায় ক্লিনিকে সিজার করানোর অভিযোগ উঠেছে।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সন্তান জন্ম দেওয়ার লক্ষ্যে ফিরোজা বেগমকে গত ১১ আগষ্ট সকালে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা স্থিতিশীল জানিয়ে ‘লেবার ওয়ার্ডে’ কর্তব্যরত সেবিকারা তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে আরও কিছু সময় অপেক্ষার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে রোগীর অভিভাবকরা তাৎক্ষনিক অপারেশনের অনুরোধ জানায়। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক না থাকার অজুহাতে রাতে অপারেশনে অপারগতা প্রকাশ করেন কর্তৃপক্ষ।

এঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে পার্শ্ববর্তী আনিকা ক্লিনিকের এক নারী কর্মচারী মোবাইলে যোগাযোগ করেন ফিরোজার স্বামীর সাথে। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ঐ গৃহবধূকে রাত ৯টার দিকে সেখান থেকে বের করে ২৩ হাজার টাকা চুক্তিতে আনিকা ক্লিনিকে নিয়ে অপারেশন সম্পন্ন হয়। সেখানেও এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক না থাকলেও অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ক্লিনিক পরিচালক ডাঃ আনিছুর রহমান নিজে সে দায়িত্ব পালন করেন।

একইভাবে ঈশ্বরীপুরের সন্তান সম্ভবা মনিরা খাতুনকে পরিবারের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন ১৯ অক্টোবর। পাঁচদিন অপেক্ষার পর দালালের প্ররোচনায় পড়ে ২৪ অক্টোবর অপারেশনের জন্য তাকে নেয়া হয় স্থানীয় বেসরকারি এ্যাপোলা হাসপাতালে। পরবর্তীতে ২২ হাজার টাকা খরচে সেখানে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জম্ম দেন ঐ নারী।

তবে শুধু ফিরোজা বা মনিরা না। বরং মুড়োগাছা গ্রামের সানজিদা, ধুমঘাটের শাকিলা, শ্রীফলকাঠি গ্রামের আকলিমার মত আরও অসংখ্য সন্তান সম্ভবা নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভাগিয়ে পার্শ্বস্থ ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করা হচ্ছে।

ক্লিনিকসমূহের পরিচালক ও স্থানীয় দালাল আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতিপয় চিকিৎসক ও সেবিকাদের যোগসাযশে হরহামেশা ঘটছে এমন ঘটনা। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভাগিয়ে নেয়ার পর যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ক্লিনিকে অপারেশনের সময় প্রসূতী মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পরক্ষণে ক্লিনিক সংশ্লিষ্টরা ভুক্তোভোগী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করে বিষয়গুলোকে ধামাচাপা দেন।

জানা যায় সরকারিভাবে নিবন্ধনভুক্ত গর্ভবর্তী নারীরা সন্তান জম্মদানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হলে বাইরের ক্লিনিকগুলো থেকে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। নানা সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোগীকে নিজেদের আস্তানায় ভিড়িয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এর আগে এ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক না থাকার কারণ দেখিয়ে অপারেশনের সাধ্যমে সন্তান জম্ম দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু মানুষ তাদের বাইরে যেতে প্ররোচনা দেয়। পরবর্তীতে রোগীর পরিবারের নিকট থেকে আদায়কৃত টাকার একটি নির্দিষ্ট একটি অংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের সহায়তাকারীদের হাতে উঠিয়ে দেয়া হয়।

ভুক্তোভোগী পরিবারসমুহের অভিযোগ গরীব ও অসহায় হওয়ার কারণে তারা শুরুতে সেবা গ্রহনের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে যান। তবে এনেসথেশিয়া চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ নানা জটিলতায় পড়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়ে পাশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন তারা। যার ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষনিক চিকিৎসকের নজরদারিতে না থাকাসহ নানান ঝুকির মধ্যে পড়ছেন বলেও দাবি এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের। আবার ক্লিনিকে নেয়ার পর নানা অজুহাতে দফায় দফায় বিল বৃদ্ধিসহ অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের পরও শারীরিক নানা সমস্যার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত বিল আদায়েরও অভিযোগ তাদের।

কৈখালী গ্রামের ফয়সাল হোসেন জানায়, তার খালা নাসিমা খাতুনকে গত ২০ আগষ্ট সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে সন্নিকটস্থ অনিকা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর অপারেশনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক তার এ্যানেসথেশিয়া দেন। একপর্যায়ে তীব্র শ্বাষকষ্ট শুরু হলে অল্পক্ষনের মধ্যে অপারেশনের আগে গর্ভে থাকা সন্তানসহ তার মৃত্যু হয়। এছাড়া সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবর্তে ক্লিনিকে অপারেশনের পর মৃত্যু হয় মানিকপুর গ্রামের আবু মুছার মেয়ে রেহানা বেগমের।

অভিযোগের বিষয়ে প্রসূতী বিভাগে কর্মরত সেবিকা রিতা রানী জানান, মাঝেমধ্যে এনে্স্থেশিয়া চিকিৎসক না থাকায় কিছু রোগী ভর্তির পর স্বেচ্ছায় চলে যায়। তবে লেবার ওয়ার্ডের কারও সেসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

আনিকা ক্লিনিকের পরিচালক ডাঃ আনিছ বলেন, কাউকে ফুসলিয়ে বাইরে আনা হয় না। বরং ভাল ও উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের স্বজনরা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে আসে তাদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তরিকুল ইসলাম জানান বিষয়টি আগে কেউ জানায়নি। তবে ভিতরের কেউ জড়িত নাকি বাইরের দালালদের তৎপরতায় এগুলো করা হচ্ছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।

সূত্র: উত্তরিাধিকার ৭১ নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *