এসভি ডেস্ক: ঈদ অর্থ খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। তবে ঈদুল আযহায় ও এর কোনটাই ছিলো না সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার মানুষের মাঝে। এখন পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে উপজেলার অনেক এলাকা৷
গত ২০ মে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’। এর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে দেখতে দেখতে প্রায় আড়াই মাস কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত অনেক পরিবার নিজ ঘরে ফিরতে পারেনি। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে এখনও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভয়াবহ আম্পানের পর থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার পানিবন্দি জনগণ। যত দিন যাচ্ছে খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এবং উচু বাঁধে বা সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। সর্বত্রই পানি, জেলখানার মতো কোনো রকম মাথা গুঁজে দিন পার করছেন তারা। এছাড়া উপজেলার অনেক এলাকায় নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকা তলিয়ে যায়। যার কারনে এলাকার মানুষদের বিড়ম্বনার যেন কোনো শেষ নেই।
শনিবার (১ আগস্ট) কয়রা উপজেলার হরিণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেন্টারে থাকা রীনা আক্তার বলেন, আমাদের আবার ঈদ কিসের? আড়াই মাস হয়ে গেছে এখনো বাড়ি যেতে পারিনি। এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। সেই কবে কপোতাক্ষা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে আমাদের ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখনো প্রতিদিন এলাকায় জোয়ার ভাটার পানি ঢুকছে।
একই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা খাদিজা খাতুন বলেন, ঈদের আগের দিন একজন এক প্যাকেট সেমাই দিয়েছে। এছাড়া কোনো কিছু পাইনি। খুবই কষ্টে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছি। স্বামী অসুস্থ কোনো আয় রোজগার নেই। জানি না কবে বাড়ি ফিরবো।
উত্তর বেদকাশি এলাকার আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি বলেন, আড়াই মাস হয়ে গেছে আমরা এই ওয়াপদার ওপরে ত্রিফল টাঙিয়ে বাস করি। আমাদের খাওয়া দাওয়াসহ চলাফেরার রাস্তায় ও এখন গলা সমান পানি রয়েছে। এখনো আমাদের কাটমারচর বেড়িবাঁধ বাধা হয়নি। এভাবে আমরা না পারছি কাজ করতে না পারছি খাওয়া দাওয়া করতে।
তিনি বলেন, আম্পানে বিধ্বস্ত কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটমারচর, হাজতখালি, কাটকাটা এলাকায় এখনও চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে।
একই এলাকার আমান শেখ বলেন, দুইটা ঈদ গেলো। নতুন জামা তো দূরের কথা, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে সন্তানের গা থেকে কাদা পানিই মুছতে পারছি না। কিছুই নেই, কর্মও নেই প্রায় আড়াই মাস। আমরা যে কি করে বাঁচবো তা ওপর আল্লাহ জানে।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সদর, দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের মানুষের আয়-উপার্জন নেই, অধিকাংশ মানুষ ত্রাণ নির্ভর। টেকসই বেঁড়িবাধ না হওয়ায় এখনো নোনা পানিবন্দী। এদের ঈদ হলো, টেকসই বেঁড়িবাঁধ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আখতারুজ্জামান বাবু জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে দ্রুত সময়ের ভিতর টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।