Spread the love

এসভি ডেস্ক: মা অসুস্থ। শরীরে কষ্ট নিয়ে তাকে পানি আনতে যেতে হয় তিনশো মিটার দূরে। ছোটবেলা থেকে ওই কষ্ট দেখে মেয়ে স্থির করে, মায়ের জন্য সে তৈরি করবে একটি পাতকুয়ো। নিজের হাতেই। শনিবার সেই কুয়াতে উঠেছে পানি। আনন্দের ষোলো কলা পূর্ণ হয়েছে মেয়ে ববিতার।

দীর্ঘ দু’বছরের চেষ্টা আর পরিশ্রমে অসাধ্যসাধন করেছেন ববিতা সোরেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ববিতা এখন গলসিতে বিএড পড়ছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে কুয়া খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তিনি।

রানিগঞ্জের বক্তারনগর রেলপাড়ে তার বাড়ি। ছুটিতে বাড়ি এলে কিছুটা করে মাটি কেটে রাখতেন। তবে তাকে সুবিধা করে দেয় লকডাউন। ওই সময় তিনি টানা গর্ত খুঁড়ে গিয়েছেন। অবশেষে এদিন মাটি-পাথরের স্তর ভেঙে বেরিয়ে এসেছে পানি। মায়ের কষ্ট দূর করতে পানির জন্য ববিতার লড়াই আজ শেষ হল। সাফল্যের হাসি তার মুখে।

ববিতা বলেন, ‘যেহেতু পড়াশোনার জন্য বর্ধমানে থাকতাম, তাই ছুটির দিন পেলেই বাড়ি ফিরে কুয়া কাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু এই লকডাউনে বাড়িতে থাকার সুবাদে কুয়োর প্রায় ১৮ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কেটে ফেলেছি। বাঁশের খাঁচা করে দড়ি বেঁধে উঠানামা করেছি। কুয়াতে জলের দেখাও মিলেছে। কিছু দিনের মধ্যে কুয়ার পানি ব্যবহারও করতে পারব।’

ছোটবেলা থেকে মাকে জলের জন্য কষ্ট করতে দেখেছেন। বাড়ি থেকে বহু দূরে দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে, তবে মিলত এক কলসি পানি। ছোট থেকে মায়ের সেই কষ্ট বিচলিত করত ছোট্ট ববিতাকে। বক্তারনগরে আধিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি ববিতাদের। মা-বাবা, এক ভাই আর দুই বোন নিয়ে তাদের পরিবার।

বাবা সামান্য বেতনে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ভাই গাড়িচালকের কাজ করে। স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করে দিদি। বাড়িতে নলকূপ বসানোর কথা ভাবা হলেও বাবার স্বল্প আয়ে তা হয়ে ওঠেনি।

এমনিতেই মেপে চালাতে হয় সংসার। পড়ার খরচও রয়েছে। রানিগঞ্জ থেকে বর্ধমান যাতায়াত, সেখানে থাকার খরচও কম নয়। তাই এক দিন ববিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, বাড়িতে নিজেই পাতকুয়া করবেন। পড়াশোনা করে জেনে নেন, ওই এলাকায় ভূগর্ভের ১৮-১৯ ফুট নীচে মিলবে পানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *