Spread the love

এসভি ডেস্ক: ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী (৫০)। গত দুইদিন আগে করোনা উপসর্গ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গ্রামের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চোরখালিউত্তর পাড়ায় গ্রামে স্বজনদের কাছে আসেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্বজনরা তাকে একটি পরিত্যাক্ত ঘরে ফেলে রাখার পর শনিবার রাতে তিনি মারা যান। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তার একমাত্র সন্তান প্রদীপ রায় চৌধুরীসহ পরিবারের কেউই তার খোঁজ নেয়নি, এমনকি তার মৃত্যুর পরও তারা তার মরদেহ সৎকারের জন্য কেউই এগিয়ে আসতে রাজি না হওয়ায় অবশেষে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সহযোগিতায় কালিয়ার ইউএনও  নিজেই ভ্যানে করে ওই মরদেহ বহন করে শ্মশানে নিয়ে সৎকার করেছেন। 

কালিয়া প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও দৈনিক খবরের  নড়াইল জেলা প্রতিনিধি শেখ ফসিয়ার রহমান বলেছেন, মৃত বিশ্বজিতের একমাত্র ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র দীপ রায়কে অনেক অনুরোধ করে কাজ হয়নি। এমনকি বিশ্বজিতের ভাই মোহন রায়ও আসতে রাজি হয়নি। অতঃপর ইউএনও নাজমুল হুদা ও ফসিয়ার রহমান বদ্ধঘর থেকে নিজ হাতে বিশ্বজিতের মরদেহ পরিত্যক্ত ঘর থেকে বের করে নিজেরাই ভ্যানে তুলে চোরখালি শ্বশানে নিয়ে দুপুর ১২ টার দিকে মরদেহ সৎকারের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও আপত্তিবাধে মরদেহের মুখে অগ্নি সংযোগ দেওয়া নিয়ে। বিশ্বজিতের বিশ্ববিদ্যালয় পুড়ুয়া ছেলে মুখে আগুন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইউএনও নাজমুল হুদার শত অনুরোধ উপেক্ষা করলে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা বললে প্রদীপ দূর থেকে পাটকাঠি দিয়ে সে তার বাবার মুখে অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। পরবর্তীতে ভ্যানচালক,সাংবাদিক ও প্রশাসনের কয়েক জনকে নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন ইউএনও।

কালিয়া উপজেলার ইউএনও নাজমুল হুদা বলেন, এমন অবস্থায় পড়তে হবে কখনো ভাবিনি। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে মরদেহ সৎকারে কেউ সহযোগিতা করেননি। এমনকি বিশ্বজিতের ভাই ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেও এগিয়ে আসেনি। হিন্দু ধর্মের প্রথা পালনের জন্য অনেক অনুরোধ ও ভয় দেখিয়ে ছেলে প্রদীপকে দিয়ে একটি লম্বা পাটকাঠির মাধ্যমে দুর থেকে শুধুমাত্র মুখাগ্নিটা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। মরদেহ ঘর থেকে বের করা ও চিতায় তোলাসহ সব কাজই তিনি নিজের হাতে করেছেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেছেন, মৃত বিশ্বজিত করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই মৃত্যুর ঘটনায় চোরখালি গ্রামকে পুরোপরি লকডাউন ও চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আতংকিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *