Spread the love

এস ভি ডেস্ক: সাধারণ চোখে স্পেন চোখ বুজে এই ম্যাচে ফেবারিট। কিন্তু একটু গভীরে তাকালে দেখা যায়, বিশ্বকাপে স্পেন কখনো কোনো স্বাগতিক দলকে হারাতে পারেনি। নব্বই মিনিট আর অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ মানে টাইব্রেকারেও রেকর্ডটা ধরে রাখল রাশিয়া। টাইব্রেকার-যুদ্ধে স্পেনকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে রাশিয়া প্রথমবারের মতো উঠেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।

তার আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ১-১ গোলে অমীমাংসিত ছিল। এই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এটাই প্রথম টাইব্রেকার পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় স্পেনের হয়ে তৃতীয় টাইব্রেকার মিস করেন কোকে। শেষ শটে ইগো আসপাসও লক্ষ্য ভেদ করতে ব্যর্থ হন। রাশিয়ান গোলরক্ষক ইগর আকিনফিয়েভের দৃঢ়তায় এই দুই মিসেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় স্পেনের।

টসে প্রথমে শট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক রামোস। বিশ্বকাপ জেতানো ইনিয়েস্তা নিজের কাজে ভুল করেননি, অনায়াসে পরাস্ত করেছেন আকিনফিয়েভকে। ইনিয়েস্তার পর শট নিতে আসা পিকেও নিজের কাজটা করেছেন ভালোভাবে। কিন্তু স্নায়ুচাপের কাছে হার মানেন কোকে। রামোস এসে পরিস্থিতি ঠান্ডা করলেও ইয়াগো আসপাস সেটা করতে পারেননি। তাঁর গোলে মারা শট ঝাঁপিয়ে পড়া দিগ্‌ভ্রষ্ট আকিনফিয়েভ ঠেকিয়ে দিয়েছেন বুট দিয়ে! ফলে মাত্র চারটি শট নিয়েই স্মোলভ, ইগনাশেভিচ, গোলোভিন ও চেরিশেভ দেশকে দিয়েছেন প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের স্বাদ। অন্তত রাশিয়া নামকরণের পর বিশ্বকাপে এমন স্বাদ আর পায়নি দেশটি।

নির্ধারিত সময়ে একবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই খেলেছে রাশিয়া। ইসকো-কস্তা-অ্যাসেনসিওদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগকে তারা কোনো গোল করতে দেয়নি। নব্বই মিনিটে স্কোরলাইন ১-১ হয়েছে শুধু রাশিয়ার কল্যাণে! অথচ ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথম দল হিসেবে এক ম্যাচে (অতিরিক্ত সময়সহ) হাজারের ওপর পাস খেলেও গোল পায়নি স্প্যানিশ আক্রমণভাগ।স্বাগতিক ডিফেন্ডার সের্গেই ইগনাশেভিচের আত্মঘাতী গোলের সুবাদে ১২ মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন। কিন্তু এর ২৮ মিনিট পর পেনাল্টি থেকে আরতিয়ম জিউবার গোলে সমতায় ফিরেছে রাশিয়া। এরপর আর কোনো গোল না হওয়ায় নকআউট পর্বের এই ম্যাচ দিয়ে প্রথমবারের মতো খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে খেলার ধার বেড়েছে স্পেনের। প্রথম ১৫ মিনিটে বেশ কিছু আক্রমণ করেছে তারা। এই অর্ধে মার্কো অ্যাসেনসিওকে তুলে রদ্রিগোকে মাঠে নামান হিয়েরো। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চতুর্থ বদলি খেলোয়াড় দেখল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে এই ম্যাচ দিয়েই প্রথমবারের মাঠে দুই দলের ৩০ জন খেলোয়াড়ের উপস্থিতি দেখা গেল। দুই দলই চারজন করে বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে।

১০৯ মিনিটে এই ম্যাচের সেরা আক্রমণটা করেছিল স্পেন। ডান প্রান্ত দিয়ে বাড়ানো পাস দারুণ ডামিতে মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে রদ্রিগো ঢুকে পড়েছিলেন রাশিয়ান বক্সে। কিন্তু ফিনিশিংটা হয়নি। পরের অর্ধে স্পেনের সঙ্গে রাশিয়া পাল্লা দিয়ে খেললেও কেউ গোলের দেখা পায়নি।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে একাদশে না রেখে চমকে দিয়েছিলেন হিয়েরো। গত এক যুগের মধ্যে যা এই প্রথম। ইনিয়েস্তার অভাবটা প্রথমার্ধে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে স্পেন। নিজেদের অর্ধে খেলা তৈরি করেছেন রামোস-বুসকেটসরা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে জর্দি আলবা থেকে ইসকো-অ্যাসেনসিও বল পেলেও তাঁরা ভাঙতে পারেননি রাশিয়ার রক্ষণ।

প্রথমার্ধের প্রায় ৩৫ মিনিট সময় পর্যন্তও স্বাগতিকদের গোলপোস্ট তাক করে স্প্যানিশ আক্রমণভাগ কোনো শট নিতে পারেনি! অথচ এই অর্ধেই তারা তিন শর ওপরে পাস খেলেছে। ৭৪ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে প্রথমার্ধে স্পেনের অর্জন একটি আত্মঘাতী গোল।

১০ মিনিটে ডান প্রান্তে মারাত্মক ফাউলের শিকার হন নাচো। ফ্রিকিক পায় স্পেন। এই বিশ্বকাপে স্পেনের প্রথম একাদশে অভিষিক্ত মার্কো অ্যাসেনসিও বলটা ফেলেছিলেন রাশিয়ান বক্সের বাঁ প্রান্তে। সেখানে সার্জিও রামোসের সঙ্গে বল দখলের লড়াই করতে গিয়ে পড়ে যান সের্গেই ইগনাশেভিচ। রাশিয়াকে সেবা দিতে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফেরা ৩৮ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের কপাল খারাপ। বলটা তাঁর পায়ে লেগে আশ্রয় নেয় জালে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় (৩৮ বছর ৩৫২ দিন) হিসেবে আত্মঘাতী গোলের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডটা এখন ইগনাশেভিচের।

রাশিয়া বিশ্বকাপে এটা রেকর্ড ১০তম আত্মঘাতী গোল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথম দল হিসেবে স্বাগতিকেরা এবার একের অধিক আত্মঘাতী গোল হজম করলেও প্রথমার্ধে তারা হাল ছাড়েনি। বিরতির আগে গোলোভিন-সামেদভ-জিউবারা ৫টি আক্রমণ করেছে স্প্যানিশ রক্ষণে। এই ধারাবাহিকতাতেই পেনাল্টি আদায় করে নেয় রাশিয়া।

ডান প্রান্ত থেকে আসা ক্রস ‘ক্লিয়ার’ করতে লাফিয়ে উঠেছিলেন জেরার্ড পিকে। বলটি তিনি পাননি। পেছন থেকে করা হেডে বল লাগে তাঁর হাতে। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন পিকে। সে যা–ই হোক, স্পটকিক থেকে রাশিয়াকে সহজেই সমতায় ফিরিয়েছেন আরতিয়ম জিউবা।

ফার্নান্দো হিয়েরোর শিষ্যরা বিরতির আগে ছোট ছোট পাসে খেলা সাজানোর চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ছিল উদ্দেশ্যহীন। এই ভুল থেকে তাঁরা শিক্ষা নিয়েছেন দ্বিতীয়ার্ধে। এ সময় তাঁরা লম্বা পাসে খেলার সঙ্গে বেশ কিছু ক্রস ফেলেছেন রাশিয়ার বক্সে। গোল পেতে মরিয়া স্পেন কোচ হিয়েরোও ৬৭ মিনিটে ডেভিড সিলভাকে তুলে মাঠে নামান আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। এর তিন মিনিট পর রক্ষণভাগে নাচোকে তুলে দানি কারভাহালকেও মাঠে নামান হিয়েরো।

এরপর স্পেনের খেলার ধার বাড়লেও তা সেভাবে চোখে পড়ার মতো ছিল না। নব্বই মিনিটে সাড়ে সাত শর ওপরে পাস খেলেছে স্পেন। অথচ আসল কাজটাই হয়নি। রাশিয়ার গোলমুখ খুলতে পারেননি হিয়েরোর শিষ্যরা। ৮৫ মিনিটে বক্সের সামনে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন ইনিয়েস্তা। আকিনফিয়েভের ঝাঁপিয়ে পড়ার দিকে বল থাকায় স্কোরলাইনটা পাল্টায়নি। নব্বই মিনিটের মাথায় দুটি কর্নার পেয়েছিল স্পেন। রাশিয়ান খেলোয়াড়দের উচ্চতার জন্য তারা একটাও কাজে লাগাতে পারেনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *