Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ী ইউনিয়নের ইন্দিরা গ্রামের ভূয়া কবিরাজ ফাহিমা খাতুন(৩৫) এর কারসাজিতে সর্বশান্ত হতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। কথার মারপাচে গত ফাল্গুন মাস থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে মানুষকে প্রতারিত করে ঝাড় ফুঁক, পানিপড়া, তেলপড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। জীনের মাধ্যমে স্টক, প্যারালাইসিস, পেটে ব্যথা, আলসার, নিঃসন্তান, জিনে ধরাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি মানুষকে প্রতারিত করছেন।

বিভিন্ন লোকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কবিরাজ ফাহিমা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় সিরিয়ালে বসে আছেন রোগী ও তার স্বজনরা। ঘরের মেঝে অপরিচ্ছন্ন। ঘরের মেঝেতে রয়েছে অপরিচ্ছন্ন নিম গাছের পাতা, পানি ও তেলের বোতল। নেই কোন ডাক্তারী যন্ত্রপাতি, নেই কোন ট্রেড কিংবা কবিরাজির লাইসেন্স, শিক্ষা দিক্ষায় নেই কোন সার্টিফিকেট, নেই কোন কবিরাজী বই পত্র, শুধু জীন আছে এবং জীন দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় বলে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে দুর দুরান্ত থেকে আসা অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।

ভিডিও দেখতে এখিানে ক্লিক করুন

প্রতিবেশীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ফাহিমা খাতুন। অল্প বয়সে বিয়ে হয় আমাদের এলাকার আবুল হাসানের সাথে। বর্তমানে তার ২ সন্তান। ফাহিমার স্বামী আবুল হাসান কৃষি কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন। তারা জমায়াতের সক্রিয় কর্মী। বিভিন্ন জায়গায় বৈঠকে যেয়ে ফাহিমা খাতুন একটু একটু আরবি শিখেছেন। সেই আরবির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে শুরু করেছেন কবিরাজির রমরমা ব্যবসা।’

তারা বলেন, ‘বছর খানেক আগে ফাহিমা খাতুনের একটি রোগ হয়। বিভিন্ন জায়গা হতে ওষুধ খেয়ে সেই রোগ থেকে বর্তমানে একটু সেরে উঠেছে। গত ফাল্গুন মাস হতে হঠাৎ সে প্রচার দেয় স্বপ্নের মাধ্যমে তার রোগ সেরে গেছে। স্বপ্নে সে জিনের সাথে কথা বলতে পারছে। জিনের মাধ্যমে সে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিতে সক্ষম। এরপর হতে বিভিন্ন এলাকা হতে তার কাছে রোকজন আসতে শুরু করে। প্রতি মঙ্গলবার তার ওখানে এসে ১০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল দিয়ে যেতে হয়। আর শনিবার সে ঝাঁড় ফুঁক, তেল ও পানিপড়া দেয়। এজন্য সে বিভিন্ন এমাউন্টের টাকা করে গ্রহণ করে। রোগী আসলে সে রোগ অনুয়ায়ী তার সাথে চুক্তি করে। রোগ সারার আগে কিছু এডভান্স ও রোগ সারলে বাকি টাকা দেওয়ার শর্ত থাকে। তবে রোগ না সারলে এডভান্সের টাকা সে ফেরত দেয় না। ফলে রোগ না সারলেও সে রোগ সারানোর কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া শুরু করেছে হাজার হাজার টাকা।’

কবিরাজি চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘বিভিন্ন মারফতে জানতে পেরে আমরা এখানে এসেছি চিকিৎসা নিতে। অনেকেই বললেন ‘আমরা বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবত এখানে আসছি। তবে রোগ সেরে যাওয়ার কোন লক্ষণ এখনও পায়নি। তবুও এক বুক আশা নিয়ে আমরা এখানে আসছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফাহিমা খাতুনের স্বামী আবুল হাসান বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বড় একটি রোগ ছিল। স্বপ্নের মাধ্যমে সেই রোগ সেরে গেছে। জিনের মাধ্যমে আমার স্ত্রী চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। অনেকেই এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরাজ ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘প্যারালাইজড, স্টকের রোগী, পেটব্যাথা, জ্বালা যন্ত্রণা, আলসার, হাড় খাওয়া, হাড় বাড়া, পঙ্গু রোগীদের ঝাড়ানোর মাধ্যমে আমি চিকিৎসা করি। আমার এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। এছাড়া যাদের সন্তান হয়না তাদের আমি চিকিৎসা প্রদান করি। কি কারণে সন্তান হয়না তা আমি দেখে বলতে পারি।’

কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমলের মাধ্যমে দেখি। আল্লাহ শক্তি দেয় বলে আমি দেখতে পারি। আপনারা কি দেখতে পারবেন? আমি গাটুলি কাটি। যেটি আপনারা পারেননা। এছাড়া জ্বিন-ভূত লাগলে ঝাড়ানোর মাধ্যমে আমি সেটিও চিকিৎসা করি।’
চিকিৎসা করতে আপনি কি টাকা নেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকেই তাদের রোগের চিকিৎসা নিতে এসে আমাকে টাকা দেয়। এছাড়া বড় ধরণের রোগ হলে আমি টাকা চেয়ে নিতে পারি। স্বপ্নের মাধ্যমে আমাকে বলেছে যে ‘তুমি টাকা চেয়ে নিতে পারবা। এজন্য বড় বড় রোগ নিয়ে আসলে আমি টাকা চেয়ে নেই বা বলি তোমার রোগ সেরে গেলে আমাকে এতা টাকা দিতে হবে।’

বড় বড় রোগ নিয়ে আসলে আপনি কত টাকা চেয়ে নিতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘যে যেমন রোগ নিয়ে আসবে তার কাছে আমি তেমন টাকা দাবী করতে পারি।’

আপনার লাইসেন্স আছে কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না। আমার কোন লাইসেন্স নেই।’

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘পানি পড়া, তেল পড়া, ঝাড়ফুঁক দিয়ে স্টক, প্যারালাইসিস, পেটে ব্যথা, আলসার, নিঃসন্তান, হাড় ক্ষয় রোগের চিকিৎসা সম্ভব না। যদি কেউ এগুলো করে তাহলে আমাদের মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় বলবো তিনি নিশ্চিত প্রতারণা করছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনই খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *