Spread the love

এসভি ডেস্ক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাহমুদপুর আমিনিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় চাকরি প্রত্যাশীদের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আবেদনপত্র জমা না নিয়ে মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাসির উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রত্যাশীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠেছে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে ৪টি পদের বিপরীতে অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের জন্য এই কর্মকান্ড করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গতকাল বিকাল ৩ টার দিকে মাদ্রাসায় গেলে দেখা যায় মাদ্রাসাটির সামনে একাধিক চাকরি প্রত্যাশীর ভিড়। এসময় জানতে চাইলে একাধিক চাকরি প্রত্যাশী বলেন, গত ২১ জুন একটি স্থানীয় পত্রিকায় ৪টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে নবসৃষ্ট উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী পদে একজন করে মোট চারজন নেওয়ার কথা জানানো হয়। উপাধ্যক্ষ পদে এক হাজার এবং অন্যান্য পদে ৫০০ টাকা নগদ/ব্যাংক ড্রাফটসহ (অফেরতযোগ্য) অধ্যক্ষ বরবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫দিনের ভিতরে আবেদন করার কথা বলা হয়। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর থেকে অধ্যক্ষ ঠিক মতো প্রতিষ্ঠানে আসতেন না। একাধিকবার আবেদন পত্র জমা দিতে মাদ্রাসায় এসে জমা না দিয়েই ফিরে গেছেন চাকুরী প্রত্যাশীরা। তারা আরও বলেন, আমরা মুঠোফোনে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন মঙ্গলবার (গতকাল) আসার কথা বলেন। আমরা দুপুরে পর আবেদনপত্র জমা দিতে এসে দেখি মাদ্রাসার অফিস কক্ষে তালা দেওয়া। অধ্যক্ষসহ কোন শিক্ষক বা কোন কর্মচারী প্রতিষ্ঠানে নেই। পরে জানতে পারলাম আবেদনপত্র জমা নেবেননা বলে মাদ্রাসা কক্ষে তালা মেরে পালিয়ে গেছেন অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ঠরা।

এসময় নিরাপত্তা কর্মী পদে আবেদনপত্র জমা দিতে না পারা গাংনিয়া মাহমুদপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে ইয়াকুব আলী বলেন, দুপুর বারোটার দিকে আমি মাদ্রাসায় আসি আবেদনপত্র জমা দেয়ার জন্য। ওইসময় নিরাপত্তা কর্মী পদে আবেদনের জন্য একটি ভাউচার (ভাউচার নং: ৬১০) দিয়ে আমার থেকে নগদ ৫০০ টাকা গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ। এসময় অধ্যক্ষ আমাকে কিছু কাগজপত্র ফটোকপি করে নিয়ে আসতে বললে আমি বাজারে যায়। মিনিট ২০ পর যখন আমি পুণরায় মাদ্রাসায় ফিরে আসি তখন মাদ্রাসার কক্ষে তালা ঝুলে থাকতে দেখি। পরে অধ্যক্ষের সাথে যোগযোগ করলে তিনি লোক পাঠিয়েছেন জানিয়ে পরবর্তীতে মুঠোফোনটি বন্ধ করে রাখেন। উপায়ন্তর না পেয়ে শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।

একই এলাকার মৃত অম্মত আলীর ছেলে আব্দুল গফফার বলেন, আমি গত কয়েকদিন ধরে উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনপত্র জমা দিতে এসেও প্রতিষ্ঠানটিতে কারো দেখা পায়নি। একপর্যায়ে অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দুপুরে আসার কথা বলেন। আমি দুপুরে আসলেও তিনি প্রতিষ্ঠানে আসেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, চারটি পদে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিতে অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্যে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি-অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ঠরা। এজন্য নিজেদের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া আর কারও আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি তারা।

এসময় তারা আরও বলেন, নিজেদের অপকর্ম যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য বাড়তি কয়েকজনের আবেদনপত্রও গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্টরা। বাড়তি হিসেবে যাদের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে তারা জানেন তাদের চাকরী হবেনা। শুধুমাত্র নিয়োগের ফমূর্লা পূরণের জন্য বাড়তিদের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নাসিরউদ্দীন বলেন, আবেদনপত্র জমা না নিয়ে মাদ্রাসায় তালা লাগিয়ে চলে আসার যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে সেটি সঠিক না। আমরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাদ্রাসায় ছিলাম। এছাড়া নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, একাধিক চাকরি প্রত্যাশীরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তারা যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *