নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আগাত হানেনি। তবে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, কৈখালী, বুড়িগোয়ালীনি, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ী ও রমজাননগর ইউনিয়নের কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে আবার কোথাও কোথাও বাঁধ ছাপিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রিউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়ন এবং কালিগঞ্জের নূরনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ ছাপিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ফলে তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার মৎস্য ঘের। কয়েকদিন ধরে উপক’লবাসী রাতদিন পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধ সংস্কার করলেও প্রবল জলোচ্ছ্বাসে তা কাজেই আসেনি।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী এলাকার মামুনুর রুশিদ বলেন, নদীর তীব্র জোয়ারে বাঁধ ছাপিয়ে বুড়িগোয়ালিনিী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা ধারনাই করিনি এতো পানি চাপ হবে। আম্ফানের চেয়েও নদীতে পানির উচ্চতা বেশী ছিল।
বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ মন্ডল বলেন, দুর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, দাতিনাখালীসহ অনেক এলাকার বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুপুরের জোয়ারের পর সৃষ্ট ভাটার সময়ে নদীতে তেমনভাবে পানির টান না থাকায় রাতের জোয়াওে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। অনেকে তাৎক্ষনিকভাবে স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটলেও অনেকে আবার ভাটার সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। ফলে তারা পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাওনিয়া, হরিশখালি, শুভদ্রাকাটি, চাকলা এই চারটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৩ ফুট উচ্চতার। আর ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে সাড়ে ৪ ফুট উচ্চতার। যা আম্ফানের থেকে দেড় ফুট বেশি। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের একটি পয়েন্টের ২০ হাত বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ভাঙনকবলিত স্থান মেরামত করতে কাজ শুরু হয়েছে।
শ্যামনগর উপেজলা নির্বাহী অফিসার আনম আবুজর গিফারী বলেন, শ্যামনগরের বিস্তিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝড়ের তেমন তীব্রতা ছিলো না তবে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণসহ পরবর্তী করনীয় নির্ধারণে আমরা সভা করেছি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ঝড়ে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ ছাপিয়ে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি শিল্পের। শত শত মাছের ঘের, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে হলে আরো সময় লাগবে। পূর্ণিমার ভরাকাটাল চলছে। ফলে রাতের জোয়ার যদি আরো বৃদ্ধি পায় তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো কয়েক গুন বেড়ে যাবে।