Spread the love

ডিডি বিশ্বাস: বেড়ীবাঁধ ভেঙে নদীর লোনা পানি প্রবেশ করে শেষ হয়ে গেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার হাজার হাজার চিংড়ী চাষীর স্বপ্ন। কেউ ধার করে, কেউ ঋণ করে নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি লিজ নিয়ে বুকভরা আশায় গত অগ্রহায়ণ মাসে ঘেরে ছেড়েছিলেন চিংড়ি মাছের পোনা। ইতিমধ্যে সেই ঘেরের মাছের পোনা বড় হয়েছিল। কেউ কেউ মাছ ধরা শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত পূর্ণিমার গোনে শ্যামনগরের দূর্গাবাটী ও আশাশুনি উপজেলার দয়ারঘাট এলাকার খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে নদীর লোনা পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা ঘেরের কোটি কোটি টাকার চিংড়ী মাছ।

সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দূর্গাবাটী এলাকার সন্তোষ কুমার সরকার ২৭ বিঘা, মনোরঞ্জন সরকারের ৭ বিঘা, বিকাশ মন্ডলে ২২ বিঘা, পার্থমন্ডলের ২০ বিঘা, গীরেন মন্ডলের ২০ বিঘা, গঙ্গা মন্ডলের ১২ বিঘা, রঞ্জিত মন্ডলের ৮ বিঘা, আতিকা মন্ডলের ১২ বিঘা, অশোক সরকারের ১৫ বিঘা জমির ঘের ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বাগদা চিংড়ি ঘের মালিক মহিতুর রহমানের ২০ বিঘা, বজলুর রহমানের ৫৫ বিঘা, দীপন কুমার মন্ডলের ৭ বিঘা, আব্দুস সালামের ১৫ বিঘা, খোকন গাজীর ৮বিঘা, মফিজুল ইসলাম লিংকনের ৭ বিঘা, শাহিন রেজার ৯ বিঘা, আসাদুজ্জামান খোকনের ৮ বিঘা, শরিফুল ইসলাম টোকনের ১১ বিঘা, সোলায়মান হক কাজলের ৪ বিঘা, সাদিক আনোয়ার ছট্টুর ১০ বিঘা, আজিজুল ইসলাম ছোটনের ৭ বিঘাসহ হাজার হাজার বিঘা জমির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।

শ্যামনগরের বুড়িগোালীনি ইউনিয়নের দূর্গাবাটী এলাকার বাগদা চাষী সন্তোষ কুমার সরকার ও কাঞ্চন মন্ডলসহ একাধিক চিংড়ী চাষী বলেন, এক মাসের মধ্যে আমাদের মাছ ধরা শুরু হবার কথা। কিন্তু গত ২৯ মার্চ ‘সুপারমুন’ পূর্ণিমার গোনে বাঁধ ভেঙে নদীর লোনা পানিতে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের অনেকেই বিভিন্ন এনজিও’র কিস্তি নিয়ে ও অন্যেও জমি লিজ নিয়ে ঘের করেছিল। তারা এখন ওই কিস্তির চিন্তায় ও লিজের টাকার চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার নিয়ে পথে বসে গেছেন।

বিনা সুদে ঋণ ও স্থায়ী বেড়ীবাঁধের দাবী জানিয়ে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দীপন কুমার, আব্দুস সালামসহ অনেক চিংড়ি চাষী বলেন, দিন আসে দিন যায়, বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় না আশাশুনি উপজেলার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের চিত্র। এখানে বারবার ভাঙে বাঁধ। বারবার ভাসে মাছের ঘের। বারবার ভাসে উপকূলের মানুষ। তবে আজও হয়নি স্থায়ী টেকসই বেড়ীবাঁধ। সরকারের কাছে আমাদের দাবী, আমাদের বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া আমাদের এই এলাকায় একটি স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মিত হোক।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার আহমেদ বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৮৯৫ জন কৃষক ১৬ হাজার ৩২৮টি ঘেরে বাগদা চিংড়ী করেন। তার মধ্যে দূর্গাবাটী এলাকার বাঁধ ভেঙে প্রায় ৯০০ বিঘা জমির ৭০০ টি ঘের প্লাবিত হয়ে আনুমানিক ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া আশাশুনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদ সৈকত মল্লিক বলেন, আশাশুনি উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ১৭৯টি ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়। এরমধ্যে আশাশুনির দয়ারঘাট বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৩৬০ হেক্টর জমির ৩১৫টি ঘের।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, প্রতিবছর নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙে হাজার হাজার চিংড়ী চাষী নিঃস্ব হয়ে যায়। তাদের মুখের দিকে তাকানো যায়না। তারা খুব অসহায় হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষের একটাই দাবী টেকসই বেড়ীবাঁধ। যদি আগামী বর্ষার আগে টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ সম্ভব না হয় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বন থাকবেনা। অনতিবিলম্বে একটি টেকসই বেড়ীবাঁধ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতির পরিমাণের একটি খসড়া তালিকা করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি বিষয়টি তারা আমলে নিয়ে একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এছাড়া চিংড়ী চাষীরা যাতে সহজ শর্তে ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা পেতে পারে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *