Spread the love

জিএম জাকির হুসাইন: অপরিকল্পিত মৎস ঘের, বসতবাড়ি নির্মাণ, খালের স্থায়ী বেড়ীবাঁধ না থাকার কারনে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে সাতক্ষীরার দুই উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের ৫ হাজার বিঘা জমির ফসল। শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যা আর ভরা মৌসুমে বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হচ্ছে ফসলের মাঠ। পানি বৃদ্ধির সময় পুরো ফসলের মাঠে কচুরিপনায় ভরে থাকছে।এছাড়া, শুষ্ক মৌসুমে সেচ প্রকল্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি কচুরিপনা সরিয়ে কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ফসল আনা নেওয়ার জন্য বিলে নেই যাতায়াতের ব্যবস্থাও। ফসলের মাঠের আইল ধরে অনেক কষ্ট করে ফসল আনতে হয় কৃষকদের। গড়ে এক দশকে দু’একবারও ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। বছরের পর বছর চাষাবাদ করে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা। ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কৃষিকে এগিয়ে নিতে ঐসকল এলাকার খালের স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও বেতনা সংস্কারের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ঘরচালা, নারায়ণপুর, হাজীপুর, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের পাথরঘাটা, কলারোয়ার জালালাবাদ ইউনিয়নের কাশিডাঙ্গা, মুরারীকাটিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ৮০’র দশকে হাজীপুর বেতনা নদী হতে ঘরচালা পর্যন্ত মালদাড়ীর খাল খনন করা হয়। খাল খনন পরবর্তী অপরিকল্পিত ঘের, বসতবাড়ি নির্মাণ ও মালদাড়ী খালের কোনপ্রকার বেড়িবাঁধ না থাকাই বেতনার জোয়ারে এবং অল্প বৃষ্টিতে এসকল অঞ্চলের কৃষি জমির ফসল ডুবে যায়। একদিকে বেতনার নদী কচুরিপানাতে ভরাট অপরদিকে খালের কোন বেরিবাঁধ না থাকার কারনে পানি নিষ্কাশনে চরম সমস্যায় পড়ে যান ওই অঞ্চলের কৃষকরা।

নারায়নপুর এলাকার কৃষক আব্দুল করিম, জাকির হোসেনসহ একাধিক কৃষক বলেন, বর্ষা মৌসুমে বেতনা নদীতে পানি কানায় কানায় ভরাট থাকার কারনে মালদাড়ী খালের পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না। এতেকরে প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় এলাকার কয়েক হাজার পরিবারের। বর্ষা মৌসুমের জমে থাকা পানি শুষ্ক মৌসুমেও বোরো ধান চাষে প্রভাব ফেলে।

তারা আরো বলেন, আগাম বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সেচ প্রকল্পের দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালিন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এম, এ জব্বার, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ-সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এস,এম শওকত হোসেন সেচ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন পরবর্তী বাৎসরিক কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে তলিয়ে থাকা অনাবাদী জমিতে মাছ চাষের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার কথা জানান তারা। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক দীর্ঘ ১০বছরেরও বেশি সময় ধরে ৫হাজার বিঘা জমিতে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নিষ্কাশন করে বোরো ধান রোপন করে আসতেছে গ্রামবাসীরা এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য বাৎসরিক কয়েক লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে সেচ প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

স্থানীয় সেচ প্রকল্প কমিটির সাধারণ-সম্পাদক জাহারুল ইসলামসহ কামরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, বদরউদ্দীন, রবিউল ইসলাম বলেন, মালদাড়ী খালের কোনপ্রকার বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে বিলে হাজার হাজার বিঘা জমিতে উন্মুক্তভাবে যে মাছ চাষ করা হয় সেটা বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ মাছ খালে অবস্থান করে।

মালদাড়ী বিলের সেচ প্রকল্প কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, বেতনা ছাড়া মালদাড়ী বিল অনেক নিচু। একারণে বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি খালের মধ্যদিয়ে বেতনা নদীতে প্রবেশ করতে পারেনা। বর্ষা মৌসুমেও ওই বিলের পানি নিষ্কাশন করা সম্ভবও হয়না। এছাড়া মালদাড়ী খালে কোন বেড়িবাঁধ নাই। ফলে অল্প বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতেকরে বছরের পর বছর ওই সমস্ত জমি অনাবাদী থেকে যাবে। একারনে খালের বেড়িবাঁধ নির্মাণ অথবা মাছ চাষে যেনো কোন সমস্যা সৃষ্টি নাহয় সেটার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ-সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে তৎকালিন সাংসদ এস,এম জব্বার ও আমি অত্র এলাকার কয়েক হাজার হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের জন্য একটা সেচ প্রকল্প চালু করি। যেহেতু বর্ষা মৌসুমে ঐসকল এলাকার ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। সেকারনে সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য বর্ষা মৌসুমে ওই সকল অনাবাদী জমিতে মাছ চাষকরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। তবে বর্তমানে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটা সম্পর্কে আমি জানিনা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে ওই এলাকার সমস্যাগুলো সমাধানে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *