Spread the love

মাসুদ পারভেজ, কালিগঞ্জ: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গৃহবন্দি হয়ে পড়া মানুষের অতিরিক্ত কাজের চাপ না থাকায় কালিগঞ্জে বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে সবজি চাষ বেড়েছে। এমনকি মাঠেও নিজ জমিতে উৎসাহের সাথে কাজ করছেন অনেকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে থমকে দাড়িয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রেমিটেন্স ও গার্মেন্ট শিল্পে নেমেছে ধ্বস, বাধাগ্রস্থ হচ্ছে রফতানি বাণিজ্য। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে। তবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় থেমে নেই কৃষকসহ কৃষি প্রেমী মানুষ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাইরে অনিরাপদ পরিস্থিতিতে কাজ করতে না পারায় গৃহবন্দি মানুষ বাড়ির আঙিনায় চাষাবাদে আত্মনিয়োগ করছেন।

উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের পানিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে কৃষি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক অনিক মেহেদী।

আঙিনায় সবজি চাষী এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে ঘরে থেকে যেমন পরিবারের প্রতি আন্তরিকতা বেড়েছে, তেমনি বাড়িতেও প্রয়োজনীয় শাক-সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তা বাজারজাত করাও সম্ভব হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর পরামর্শে ও তার উৎজীবনি শক্তিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কৃষি জমি ছাড়াও বাড়ির আঙিনা পরিচ্ছন্ন রেখে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছি৷ শুধু করোনার ভয়ে নয়, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়িতে চাষাবাদ করার বিকল্প নেই৷ পারিবারিকভাবে চাষের জন্য একটু সময় দিলে বিষাক্ত কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এ ধরনের কাজের সুন্দরভাবে সংসার চালানোর পাশাপাশি বাড়তি খরচও হ্রাস পায় ।

উপজেলার একই গ্রামের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন লাভলী বলেন, বাড়িতেই সবজির চারা উৎপাদন করি, বাড়তি কোন খরচ হয়না। পরে চারাগাছ বাড়ির পাশে থাকা পতিত জায়গায় রোপন করি। এখান থেকে যা উৎপাদন হয় তাতে মোটামুটি সংসার চলে৷ এখন বাড়িতেই বেগুন, কাঁচামরিচ, মানকচু, ডাঁটা, কুমড়ো, লাউ, ঢেঁড়শ, লালশাক ও শসা রয়েছে। এসব সবজি পরিবারে চাহিদা মেটানোর পর অনেক সময় আশপাশের বাজারে বিক্রি করি। সেই অর্থে ছেলেটার লেখাপড়ার খরচ বেরিয়ে আসে৷ সুদমুক্ত কোন ঋণ পেলে পরিকল্পিতভাবে চাষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম৷

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ রুহুল আমীন এই প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলায় এ ধরনের আগ্রহী চাষীদের চিহ্নিত করে তাদের মাঝে সবজি বীজ, সার ও উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার কৌশল সম্পর্কে কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বিক্রি করে পরিবারের জন্য বাড়তি আয়ের সংস্থান করা যায়। বসতবাড়ির আঙিনায় পরিবারের মহিলা ও ছেলেমেয়েদের অবসর সময়ে সবজি চাষের কাজে লাগিয়ে পারিবারিক শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

তিনি বলেন, প্রতিদিন একজন মানুষের যেখানে ২২০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন সেখানে আমরা খাই মাত্র ৮০ গ্রাম। প্রয়োজনীয় পরিমাণ শাকসবজি না খাওয়ার কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পুষ্টির দিক থেকে বাড়ির আঙ্গিনায় চাষের প্রায় সব শাকসবজি উন্নত মান সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে বছরব্যাপী উপযুক্ত পরিমাণ সবজি খেয়ে পুষ্টিহীনতা দূর এবং রোগমুক্ত থাকা সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *