Spread the love

এসভি ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই ভাইরাসে। করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে চলছে লকডাউন, জরুরি অবস্থা সহ নানা ধরনের পদক্ষেপ। এরপরও কমছে না এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা। দ্রুত প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্ট চলছে। এর মধ্যেই সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দুই বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ‘করোনা ভাইরাস আগামী বছরগুলোয় ফিরে আসতে পারে। এর মধ্যে দ্রুত কার্যকর ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি না হলে শারীরিক দূরত্বের ব্যবস্থাগুলো বিভিন্ন স্থানে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই কার্যকর করার প্রয়োজন হতে পারে।’ খবর দ্য গার্ডিয়ান।

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন কার্যকর চিকিৎসা, একটি ভ্যাকসিন বা ক্রমবর্ধমান গুরুতর যত্নের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলে শারীরিক দূরত্বের ব্যবস্থাগুলো কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে। তবে এগুলো না পাওয়া গেলে শারীরিক দূরত্ব ও নজরদারি ২০২২ সাল পর্যন্ত বজায় রাখা প্রয়োজন হতে পারে।’

যদিও সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্য বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘আমার মনে হয় করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হতে ১৮ মাসের মতো সময় লাগবে। বহু বছর ধরে ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছেন এমন অনেকের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। তাদের দেওয়া তথ্য আমাদের এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। কারণ, প্রথমে আপনাকে সংশ্লিষ্ট যৌগগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায় পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ ট্রায়ালের ধাপ। আমি নিশ্চিত যে ভ্যাকসিনের পরীক্ষার জন্য এফডিএ (মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করবে, যেমনটা তারা করেছিল ইবোলার সময়। তারপরও কার্যকর ও নিরাপদ পরীক্ষার জন্য সময় লাগবে। এরপর রয়েছে ভ্যাকসিনটির উৎপাদনের পর্যায়। মনে হয় সত্যি ১৮ মাসই লাগবে।’

বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিলোজির অধ্যাপক মার্ক লিপসিচ উপসংহারে পৌঁছেছেন যে ‘ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা ব্যতিরেকে পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে আরো ভয়াবহ হতে পারে।’

মার্ক লিপসিচ বলেন, ‘দুটি বিষয় সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে কাজ করে, সংক্রমিত মানুষ ও সংবেদনশীল মানুষ। আমাদের শরীরে যতক্ষণ না অধিক পরিমাণে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। ভাইরাসটির সংক্রমণের বিস্তার সম্পর্কে আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, তার সঙ্গে হোয়াইট হাউজের দেয়া এ গ্রীষ্মেই মহামারী শেষের পূর্বাভাস সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে গত ডিসেম্বরে প্রথম করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। তারপর তিন মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনও নিয়ন্ত্রণের লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। ইতিমধ্যে করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সারাবিশ্ব। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৭ হাজার ৯৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৩ জন।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৫১৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার ১৭১ জন। 

সবমিলিয়ে, বর্তমানে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৯ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ১১৭ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৫১ হাজার ১৪২ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।

ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯, মারা গেছে ২৮ হাজার ৫২৯ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।  

এছাড়া ইতালিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৫, মারা গেছে ২১ হাজার ৬৪৫ জন। স্পেনে আক্রান্ত ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৯, মারা গেছে ১৮ হাজার ৮১২ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৩, মারা গেছে ৩ হাজার ৮০৪ জন। চীনে আক্রান্ত ৮২ হাজার ৩৪১, মারা গেছে ৩ হাজার ৩৪২ জন। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩, মারা গেছে ১৭ হাজার ১৬৭ জন। ইরানে আক্রান্ত ৭৬ হাজার ৩৮৯, মারা গেছে ৪ হাজার ৭৭৭ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৯৮ হাজার ৪৭৬, মারা গেছে ১২ হাজার ৮৬৮ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৫৭৩, মারা গেছে ৪ হাজার ৪৪০ জন। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ২৮ হাজার ১৫৩, মারা গেছে ৩ হাজার ১৩৪ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৬ হাজার ৩৩৬, মারা গেছে ১ হাজার ২৩৯ জন। তুরস্কে আক্রান্ত ৬৯ হাজার ৩৯২, মারা গেছে ১ হাজার ৫১৮ জন। ব্রাজিলে আক্রান্ত ২৮ হাজার ৭৪৬, মারা গেছে ১ হাজার ৭৫৭ জন। কানাডাতে আক্রান্ত ২৮ হাজার ৩৭৯, মারা গেছে ১ হাজার ১০ জন। সুইডেনে আক্রান্ত ১১ হাজার ৯২৭, মারা গেছে ১ হাজার ২০৩ জন। 

এছাড়া ভারতে মোট আক্রান্ত ১২ হাজার ৩৭০, মারা গেছে ৪২২ জন। পাকিস্তানে আক্রান্ত ৬ হাজার ৩৮৩, মারা গেছে ১১১ জন। বাংলাদেশে আক্রান্ত ১ হাজার ২৩১, মারা গেছে ৫০ জন।

এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি, এর কারণে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিও কাজ না করতে পারে তাই এগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *