নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের এক বিপ্লবী ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের লড়াকু এই সৈনিকের তুলনা তিনি নিজেই। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার সবকটিতে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দলের দুর্দিন-দূর্বিপাকে যেভাবে তিনি কাজ করেছেন সাতক্ষীরা জেলায় তার সমকক্ষ বর্তমানে কেউ নেই। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টে যেভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন তা তুলনাহীন। এমনকি ঘোর বিরোধী শত্রু পক্ষও তাঁর কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যাননি কখনো। সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাধ্যমত। শিক্ষিত মার্জিত এই মানুষটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৫০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী মৃত কমর উদ্দীন সরদার ও দিলারা খাতুন দম্পত্তির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। ১৯৭৫ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহপাঠী সাবেক এমএলএ মমতাজ আহম্মেদ তাঁর মেধা প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে নিজ কন্যাকে আবু আহমেদের সাথে বিবাহ দেন। বিবাহিত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। অধ্যক্ষ আবু আহমেদ পেশাগত জীবনে ১৯৮৩ সালে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৪ সালে একই কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি পরিবহন ব্যবসা ও সাংবাদিকতা পেশার সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে তিনি সাতক্ষীরা থেকে নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছেন দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকা। সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার তিনি সম্পাদক ও প্রকাশক। দিন বদলের অঙ্গীকারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ছাত্র জীবন থেকে অন্তরে লালন করে আজও অটল অবিচল বটবৃক্ষের মতো সাতক্ষীরা শহরে ছায়া দান করে চলেছেন নিরলসভাবে। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি একচুলও পিছপা হননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হতে। তাছাড়া সাংবাদিকতার জগতে তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের ৭ বারের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাচনে পুণরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সাতক্ষীরা জেলা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহবায়কও তিনি। অধ্যক্ষ আবু আহমেদ সাতক্ষীরা জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া এই মহান নেতার রাজনৈতিক জীবন যতো উজ্জল এ জেলায় তার সমকক্ষ আর কেউ ছিলেন না বা আজও নেই।
আরো জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ১৯৬৯ সালে ৬ দফা আন্দোলন ও ছাত্র সমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে গণআন্দোলনে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসাবে অংশ গ্রহণ করে আন্দোলনকে গতি দান করেন। ছাত্র থাকাবস্থায় এ রাজনীতিবিদ ১৯৬৯-১৯৭০ সালে যশোর সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আ’লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করে যশোর জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালে অধ্যক্ষ আবু আহমেদ প্রয়াত যুবনেতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির নির্দেশে ভারতের উত্তর প্রদেশের চাকরাতা (টেন্ডুয়া) সামরিক ঘাটিতে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান। সেসময় বঙ্গবন্ধুর দুই সন্তান শহীদ শেখ কামাল ও শেখ জামালের সাথে ৫ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করে যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সালে তিনি যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মর্নিং শো’জ দ্যা ডে’ প্রবাদ বাক্যকে সত্য প্রমানিত করে আবু আহমেদ ১৯৭৪-৭৫ সালে ছাত্রলীগের ব্যানারে যশোর সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, স্বপ্ন দেখেন, যাঁর আদর্শ অন্তরে লালন করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছেন অবশেষে সেই বঙ্গবন্ধুর স্নেহাশিষ লাভ করেন অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭৪ সালে ২৯ নভেম্বর রাত ১০ টায় তৎকালীন জাতীয় সংসদ ভবনে (নাখালপাড়া) স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে শেষ সাক্ষাত হয় তাঁর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরম মমতায় কাছে নিয়ে স্নেহভরা হাত অধ্যক্ষ আবু আহমেদের মাথায় রেখে দোয়া করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর সারা দেশের ন্যায় যশোরের অনেক নেতা পালিয়ে জীবন যাপন করলেও ছাত্রনেতা হিসেবে আবু আহমেদ সে সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টাকালে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। তৎকালীন সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা আবু আহমেদ পাশবিক-শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলেও তাকে ছেড়ে না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। প্রায় এক বছর কারাভোগের পর ১৯৭৬ সালের ২৬ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ।
এরপর ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই যশোর জেলা আওয়ামীলগ কার্যালয়ে জেলা ছাত্রলীগের এক কর্মী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মনোনীত করা হয়। একই বছরের ১৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় যশোর জেলা শহরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে ঝাটিকা মিছিল বের করে আবু আহমেদসহ একদল যুবক যারা বঙ্গবন্ধুকে অন্তর দিয়ে ভালবাসতেন।
১৯৭৭ সালে আ’লীগ পুণর্গঠনের লক্ষে আহবায়ক কমিটি গঠিত হলে কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক প্রয়াত সালাহউদ্দীন ইউসুফ আবু আহমেদকে সাথে নিয়ে যশোর, ঝিকরগাছা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় আ’লীগের কর্মী সভায় যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে সাতক্ষীরায় এসে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ সাতক্ষীরা সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন।
সামরিক সরকার এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে জাতীয় শ্রমিকলীগ বাংলাদেশ (রেজিঃ নং- বাজাফে-১৩) এর সাতক্ষীরা জেলায় গোড়াপত্তন করেন এই রাজনীতিবিদ। ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা আসনে আ’লীগের দলীয় প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদের শ্বশুর মরহুম মমতাজ আহম্মেদ’র প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী হিসাবে বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর সাতক্ষীরায় জাতীয় শ্রমিকলীগের প্রথম জেলা সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই সাথে সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে ১৯৮৪ সাল থেকে একাধারে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ২১ বছর সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আব্দুল্লাহ সরদার বলেন, ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসক, জেনারেল জিয়া, স্বৈরাচারি এরশাদ, খালেদা- নিজামী সরকার বিরোধী প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আ’লীগের ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচীতে স্বশরীরে অংশ গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ স্যার। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ও কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধী মামলার রায় পরবর্তী ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জামায়াতের নাশকতার ভয়াল ঘটনা সমূহ মোকাবেলা করতে তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেন এই সাতক্ষীরা শহরেই। তিনি মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে জামায়াত শিবির ক্যাডারদের বিরুদ্ধে মিছিল, মিটিংসহ বিভিন্ন সমাবেশে অংশ গ্রহণ করে সবসময় দলকে চাঙ্গা রেখেছিলেন। জামায়াত বিএনপি’র সহিংসতার বিরুদ্ধে জেলা আ’লীগের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে রাজপথেই ছিলেন। উত্তাল সেই দিনগুলোতে জেলা শহরে আর কোন নেতা ঘর থেকে বের না হলেও অধ্যক্ষ আবু আহমেদ রাজপথেই পড়ে ছিলেন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে। জামায়াত- বিএনপির ভয়ে যখন কোন নেতা ঘর থেকে বের হননি বা বের হওয়া সম্ভব ছিলো না তখন জেলায় জামায়াত শিবিরের সহিংসতায় ১৬ জন দলীয় নেতাকর্মী শহীদ হলে তাদের মধ্যে ১৩ জন শহীদ নেতাকর্মীর লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে মর্গে নেয়া এবং নিজ খরচে পোস্ট মর্টেমসহ নিজ উদ্যোগে লাশগুলো শহীদ নেতা কর্মীদের স্ব-স্ব বাড়িতে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। দলের দুর্দিনে যিনি ছিলেন দলের জন্য ঢাল তিনি চেয়ে বা জোর করে কোনকিছুই আদায় করে নেননি দলের থেকে। ছাড় দিতে দিতে তিনি দলের জন্য সবকিছু ছেড়েই দিয়েছেন। পরপর তিন তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা- ২ আসনে মনোনয়ন চেয়েও দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে বসে যান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্ততপক্ষে একবার আ’লীগের দলীয় মনোনয়নের ব্যাপক আশাবাদী সাতক্ষীরাবাসী ।