Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: সুমাইয়া খাতুনের(১৪) জন্মের আগেই আলাদা হয়ে গেছে বাবা-মা। থাকে মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে। বাবা লেখাপড়ার খরচ দেন না। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেছেন বাবা নেয়ামত আলী। শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বাবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় হাজির হয় সাতক্ষীরার কলারোয়া ডিএসএইচ সিঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন। ঘটনার সমাধান হয়নি, তবে এখন থেকে সুমাইয়ার লেখাপড়ার খরচ দিবে কলারোয়া থানা পুলিশ।

সুমাইয়া খাতুন (১৪) কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের বহুড়া গ্রামে নানা ইসরাফিল সরদারের বাড়িতে থাকে। বাবা নেয়ামত আলী সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচপোতা গ্রামে আরেকটি বিয়ে করে সংসার করছেন।

সুমাইয়ার মামা আব্দুর রহমান জানান, সুমাইয়ার জন্মের আগে তার বোনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় নেয়ামত আলীর। জন্মের পর খোঁজও নেয়নি তিনি। তবে সুমাইয়া একটু বড় হওয়ার পর মাঝেমধ্যে তার বাড়িতে নিয়ে যায় বাবা। গত চারদিন আগে সুমাইয়া গিয়েছিল বাবার বাড়িতে। তবে বাবা বলেছে, বিয়ে দিয়ে দিবে মেয়েদের লেখাপড়ার দরকার নেই। লেখাপড়া করে কী হবে? পরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে।

তিনি আরও বলেন, লেখাপড়ায় খুব ভালো সুমাইয়া। বিদ্যালয়ে ১৬৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রোল নম্বর ১০। আমরাও গরিব মানুষ। ইচ্ছা থাকলেও সব খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।

স্কুলছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, আমি মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকি। আমার বাবা জন্মের পর থেকে আমাকে কোনো খরচ দেয় না। আমি লেখাপড়ার জন্য খরচ চাইলে বলছে, লেখাপড়া করে কী হবে? বিয়ে দিয়ে দিব। মেয়েদের এতো লেখাপড়া করার দরকার নেই। আমি ওসি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। স্যারকে জানিয়েছি। স্যার বলেছেন, তিনি বাবাকে বলবেন তাছাড়া আমাকে প্রতিমাসে লেখাপড়ার জন্য কিছু খরচও দিবেন। দুই হাজার টাকাও দিয়েছেন।

তবে সুমাইয়ার বাবা নেয়ামত আলী বলেন, আমি লেখাপড়ার জন্য খরচ দেই, আবার ওর নানাও দেয়। সুমাইয়ার লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ের জন্য কোনো চাপ দেইনি।

কলারোয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির বলেন, মেয়েটি থানায় তার  বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানিয়েছে, বাবা তার লেখাপড়ার খরচ দেয় না। তাছাড়া পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার কথাও। মেয়েটিও মেধাবী, বিদ্যালয়ে প্রায় দুশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ রোল। পরে থানার কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিলে তার লেখাপড়ার খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা যতদিন এই থানাতে থাকব ততদিন প্রতি মাসের ১-১০ তারিখের মধ্যে সুমাইয়াকে লেখাপড়ার জন্য খরচ দিব বলে কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া তার বাবাকেও বুঝিয়ে বলা হবে যেন মেয়েকে খরচ দেন। কেননা এটি জোর করার বিষয় নয়, মানসিকতার ব্যাপার। ফুটফুটে মেয়েটির জীবন আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। তার পাশে আমাদের থাকা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *