Spread the love

এসভি ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় নানা রকম প্রস্তুতির কথা সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোজাম্মেল হক রাসেল।

তিনি জানান, এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে করোনা ভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মাত্র ৬ মাসের মাথায় আবার আরেকটি ঘূর্ণিঝড় “আমফান” এর আঘাতের মুখে পড়তে হবে আমাদের। কিন্তু প্রস্তুতি ছাড়া কিইবা করার আছে আমাদের? তাই আসুন প্রস্তুতি নিই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে যাতে আমাদের সবচেয়ে কম ক্ষতির শিকার হতে হয় । প্রস্তুতি হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো/আদেশ/নির্দেশ আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করব-

১) যেহেতু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরী তাই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শেল্টারে/স্কুল/কলেজে আশ্রয়গ্রহণের ক্ষেত্রে পরস্পর পরিচিত সুস্থ মানুষকে একসাথে রাখা হবে। অসুস্থদের ভিন্ন জায়গায় রাখা হবে। কেউ দয়া করে নিজের অসুস্থতার কথা লুকাবেন না। অসুস্থদের সেবা করতে আমরা প্রস্তুত, আমাদের হাসপাতাল ও ডাক্তারগণ প্রস্তুত রয়েছেন।

২) যেহেতু অনেককে আলাদা আলাদা রাখতে হবে সেহেতু উপজেলার সকল স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা খোলা রাখতে রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ আজই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারের নিকট প্রতিষ্ঠানের চাবি জমা দিবেন অথবা প্রতিষ্ঠানের দারোয়ানকে ২৪ ঘন্টার জন্য প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত রাখবেন। এক্ষেত্রে কোন ধরনের শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না। কেউ গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন,২০১২ এর ৩৬,৩৭,৪৪ ধারা ও দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারা মোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। ( আজই সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানগণকে এই নির্দেশটি অবহিত করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অনুরোধ করা হলো।) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক/কর্মচারীকে তাদের ফোন নাম্বার সব সময় খোলা রাখতে হবে এবং দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজ করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

৩) সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথা কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ফিশারি ইত্যাদিকে তাদের বিভাগ সংশ্লিষ্ট সম্পদ যাতে বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারে ব্যপক প্রচার ও ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো। মাছের ঘের জাল দিয়ে বাধ দিয়ে ঘের উচু করা , ধান কেটে ফেলা, গবাদি প্রাণি নিরাপদে রাখা ইত্যাদি ।

৪) ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, মহিলা মেম্বার, ইউপি সচিব, গ্রাম পুলিশকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যানগণকে তার নিজ নিজ ইউনিয়নে কর্মরত দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী/ কর্মকর্তাগণের সাথে জরুরী সভা করে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে কাল সকাল হতে প্রচার চালাতে হবে। জনগণের কোন কোন অংশকে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠাতে হবে সে সম্পর্কে পরিকল্পনা পূর্বেই চিন্তা করে রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

৫) প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে শুকনা খাবার/ মোমবাতি/দেয়ারশেলাই/ টর্চলাইট/রেইনকোট ইত্যাদি কোন কোন দোকান হতে সংগ্রহ করা হবে তা নির্নয় করে সে সব দোকানকে শুকনা খাবার/ মোমবাতি/দেয়ারশেলাই/ টর্চলাইট/রেইনকোট ইত্যাদি সংগ্রহে রাখতে ও অনুমতি ছাড়া বিক্রয় না করতে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হলো।

৬) উপজেলা বন কর্মকর্তাকে করাতিদের সাথে যোগাযোগ করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকদের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত ঝড়ে পড়া গাছ কাটার প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করা হলো। তাকে নিজে বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক করাত/ ইলেকট্রিক করাত সংগ্রহ করতে অনুরোধ করা হলো।

৭) উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তাকে প্রতি ইউনিয়নের জন্য মেডিকেল টিম গঠনের অনুরোধ করা হলো। জরুরী ঔষধ সংগ্রহে রাখতে অনুরোধ করা হলো।

৮) উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সাইক্লোন শেল্টার বা শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রস্তুতি রাখতে অনুরোধ করা হলো।

৯) দুর্যোগসংক্রান্তে আইন-শৃংখলার যাতে অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি ও পুলিশি টহল প্রয়োজনমাফিক বজায় রাখার/ বৃদ্ধি করার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হলো। এসময় কেউ আইন অমান্য করলে তাকে বিধিমোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালত বা অন্য উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করতে অনুরোধ করা হলো।

১০। উপজেলার সরকারী বেতনভুক্ত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে কর্মস্থলে অবস্থান করতে অনুরোধ করা হলো। ইতোমধ্যে আদেশকৃত স্থানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।প্রয়োজনমাফিক নতুন আদেশ জারী করা হবে।

১১। সরকার প্রয়োজন মনে করলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন,২০১২ এর ২৫ ধারা মতে যে কোন বেসরকারী ব্যক্তিকে দুর্যোগের কাজে সম্পৃক্ত করতে নির্দেশ দিতে পারে। তাই সকল এনজিও ও বেসরকারি ক্লিনিককে দুর্যোগ সংক্রান্ত কাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে অনুরোধ করা হলো। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প প কর্মকর্তাকে বেসরকারী ক্লিনিককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হলো।

১২। উপজেলা লেভেলের সকল অফিসারকে ফোন নাম্বার সর্বদা খোলা রাখতে অনুরোধ করা হলো। কারো ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেলে তিনি কর্মস্থলে নেই মর্মে ধরে নেয়া হবে।

১৩। সম্মানিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানগণ, জেলা পরিষদ সদস্যগণসহ অন্যন্য জনপ্রতিনিধিগণকে জনগণকে নিরাপদ জায়গায় যাওয়াসহ সকল প্রয়োজনীয় কাজে মোটিভেট করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

১৪। বিজ্ঞ নির্বাহী হাকিম, জনাব সিফাত উদ্দিনকে ২৪ ঘণ্টা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে ফোর্স ও অন্যান্য লজিস্টিক প্রস্তুত রাখার অনুরোধ করা হলো।

১৫। সময়ে সময়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ জারী করা হবে।

১৬। এই ফেইসবুক পোস্ট সরকারী আদেশ ও উক্ত আদেশ বিধিমোতাবেক জারীকৃত হিসেবে পরিগণিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *