Spread the love

জাহিদ হোসাইন: সাতক্ষীরা জেলার সাত উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস আছে ৭টি। ৭টি রেজিস্ট্র্রি অফিসে নিয়মিত ৭ জন সাব-রেজিস্ট্রিারের দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৭ উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার আছেন মাত্র ৪ জন।

সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রফিকুল আলম। তবে আশাশুনি সাব-রেজিস্ট্রার দুলাল কুমার বর্তমানে ‘ওএসডি’তে থাকার কারণে সেখানে খন্ডকালিন (সপ্তাহে ১ দিন) সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সদর সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল আলমকে।

কলারোয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাইদুর রহমান তবে তালার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারের পদটি বর্তমানে শুন্য থাকার কারনে সেখানে খন্ডকালিন(সপ্তাহে ২ দিন) সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে কলারোয়ার সাব-রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমানকে। 

কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অজয় কুমার তবে দেবহাটা সাব-রেজিস্ট্রার পার্থ প্রতিম মূখার্জীকে মাসখানেক আগে ঘুষের টাকাসহ আটক করে দুদক। বর্তমানে তিনি জেলখানায় থাকার কারণে দেবহাটার খন্ডকালীন (সপ্তাহে ২ দিন) সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে অজয় কুমারকে। এছাড়া শ্যামনগর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইমরুল হাসান।

জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার সংকটে ধুকে ধুকে চলছে সাতক্ষীরার ৭ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সপ্তাহে ৫ দিন সরকারী কার্য দিবস। ওই ৫ দিনই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি হবার কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের কারণে সাতক্ষীরার শ্যামনগর সাব রেজিস্ট্রি অফিস ছাড়া বাকি ৬ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কোথাও সপ্তাহে পূর্ণাঙ্গ ৫ দিন দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হচ্ছে না। এছাড়া ওই ২ দিন রেজিষ্ট্রির বিষয়টিও নির্ভর করে সাব-রেজিস্ট্রারের ইচ্ছার উপরে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে দলিল দাতা, গ্রহীতাসহ দলিল লেখকদের।

এছাড়া এক উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিস হতে অন্য উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের দুরত্ব অনেক হওয়ায় যাতায়াতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্বয়ং সাব-রেজিস্ট্রারদের। 

আরো জানা যায়, রেজিস্ট্রির দিনে শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রির উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয় বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। কিন্তু অধিকাংশ সাব-রেজিস্ট্রার ১২টার পর এজলাসে ওঠেন এবং অফিস সময়ের মধ্যে মাত্র ৫০/৬০ টি দলিল রেজিস্ট্রি করেই চলে যান। এ সপ্তাহে দলিল রেজিস্ট্রি কম হলে পরের সপ্তাহে তার সাথে আবার নতুন  দলিল যোগ হয়। ফলে বেরে যায় দলিলের পরিমাণ। তাছাড়া বেড়ে যায় দূরদুরান্ত থেকে আসা জমির দাতা ও গ্রহিতাদের ভোগান্তি। কিছু রেজিস্ট্রি অফিসে ১ ও ২ দিন দলিল রেজিস্ট্রি হবার কারণে জমি রেজিস্ট্রি করতে বার বার তদবির আর ধর্ণা ধরতে হয় রেজিস্ট্রি অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে। 

আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কি মি দূর প্রতাপনগর ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের জনৈক আব্দুল গফুর সরদার জানান, কিছু জমি কিনেছি। জমি রেজিষ্ট্রি হবার দিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। দাতাদের নিয়ে আশাশুনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছিলাম। দলিল লেখক দলিল লিখে এজলাসে জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু দলিলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় রেজিস্ট্রির কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে রেজিস্ট্রি না করতে পেরে দাতা-গ্রহিতাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে । ক্রয়কৃত জমির কয়েকজন দাতা বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন। জমি হস্তান্তর করার জন্য দু’একদিনের জন্য ছুটি নিয়ে এসেছিলেন তারা কিন্তু হস্তান্তর না করেই ফিরে যেতে হয়েছে তাদের। পরের সপ্তাহে জমি রেজিস্ট্রির জন্য আবারও ছুটি নিয়ে আসতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক বলেন, সরকারিভাবে দেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে জেলা রেজিস্ট্রার ও প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে সাব-রেজিস্ট্রারের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও আমাদের এখানে নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার। ফলে জমি রেজিস্ট্রিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকারে ধারণ করেছে। সাব-রেজিস্ট্রার সংকটের কারণে এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাতক্ষীরা জেলার ৭ উপজেলার অনেক দাতা, গ্রহিতা ও দলিল লেখকরা।রেজিস্ট্রি না করে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কারণে আমাদেরকেও মাঝে মাঝে গালমন্দ করেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হলে আমরাসহ দলিল গ্রহিতা ও বিক্রেতারা অনেক উপক্রিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুল হাফিজ বলেন, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *