Spread the love

জামালউদ্দীন: সাতক্ষীরার তালা ও যশোরের কেশবপুর উপজেলার নোমান্সল্যান্ডে অবস্থিত বগা শাহকারারীয়া রহঃ সিনিয়র মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসানের বিরুদ্ধে ২টি অবৈধ ইটভাটা থেকে বছরে ৪ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান ইট ভাটার চিমনির পোড়া ধোয়া ও ব্যবহৃত কাঁচা ইট, পাকা ইট ও মাটি বহনে যন্ত্রদানবের যেমন শব্দ দূষণ হচ্ছে তেমনিভাবে বায়ু দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে পাঠগ্রহণে মাদ্রাসার ৩শ ছাত্র-ছাত্রী ব্যাঘাত ঘটছে সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে গিয়ে দেখা যায়, পাটকেলঘাটা হতে কেশবপুর অভিমুখী মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সড়কের বগা নামক স্থানে মাদ্রাসাটির অবস্থান। মাদ্রাসার দক্ষিণ প্রান্তে সীমানা কপোতাক্ষ নদের একটি সংযোগ খাল। খালটির প্রস্থ ১০-১২ ফুট। খালের ওপারেই গত ৪ বছর যাবত তালা উপজেলার সেনপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম সরদার মেসার্স বিএসবি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা গড়ে তুলেছে। ইটভাটা মালিক ও তার পুত্র ইমরান বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

দায়িত্বরত ম্যানেজার সাংবাদিকদের নাম জানাতে অসংকোচবোধ করে বলেন, আমাদের কাগজপত্র সবই আছে। বাংলাাদেশ ইট ভাটা নির্মাণ ও ইট প্রস্তুত আইনে ২০১৩ সংশোধনীয় উল্লেখ আছে যে, ফলজ ও বনজ বাগান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকায় ইট ভাটা গড়ে তোলা যাবে না। কিন্তু এখানে ইটভাটা মালিকরা এতটাই প্রভাবশালী যে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করছে।

ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতো অনেকেই থাকলেও তাদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। যে টাকার সবচেয়ে মোটা উৎকোচ গ্রহণ করেছে ঐ মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসান। মাদ্রাসার উত্তর প্রান্তে মাত্র ৩০ গজের মধ্যে সেনপুর বাজার। বাজারের পাশেই একই গ্রামের বাবলুর রহমান (পোল্ট্রি বাবলু) আরো একটি ইটভাটা গড়ে তুলে ফসলী জমি, ফলজ ও বনজ বাগান নষ্ট করে আরো একটি ইট ভাটা গড়ে তুলেছে। এসব ভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকলেও মালিকপক্ষের দাবী বৈধ কাগজপত্র আছে। সাংবাদিকদের তোয়াক্কা করার সময় নেই।

ভাটা দু’টির পাশ দিয়ে বহমান সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বিনেরপোতা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ ইসহাকুল ইসলাম, গরু ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ গাজী, সবজি ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম, মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ সহ একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রাস্তার পাশে ইটভাটা। যার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩টি বাজার, তারই মধ্যে চলছে অবৈধ ভাটা। পাকা রাস্তায় রৌদ্রে ধুলা, বৃষ্টিতে কাদা, মাটি বহনের দানবযন্ত্রের শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ। সড়কে চলাচলই যেন জীবনের ঝুঁকি। একইভাবে কথা হয় মাদ্রাসার হাফিজিয়া শাখার ছাত্র মাছুম বিল্লাহর সাথে। তার বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। সে সেনপুর গ্রামের আবু হেনা আলম এর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে।

তিনি জানান, ভাটার ধুলাবালি মাদ্রাসার বাতাসে লেগেই থাকে। চিমনির ধোয়ায় নাক জ্বালা করে। সবসময় অস্বস্তিবোধ করলেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। সেনপুর বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের দাবী ভাটা দুটির মালিক সেনপুর গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তি। তাদের অর্থের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। রাস্তার ধারে ভাটার চিমনির ধোয়ার গন্ধ ও ধুলাবালিতে খাবার তৈরি করলে কেউ হোটেলে খাবার খেতে চায় না। বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার মতো। এসময় হোটেল ব্যবসায়ী সাংবাদিককে পেয়ে আনন্দের সাথে সমস্যার কথা জানালেও কিছুক্ষণ পর তাকে বিচলিত দেখা যায়।

অনেকটাই কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে বলেন, আমি আপনাদেরকে এসব বলেছি যদি জানতে পারে তাহলে আমার উপর বিভিন্ন চাপ আসতে পারে। আপনারা কি দেখবেন আমাকে ! সাধারণ মানুষের এমন চাওয়া পাওয়া কি সাংবাদিক পূরণ করতে পারে ? মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, তা আদৌ সত্য নয়। তার এমন উত্তরে আবারো জানতে চাওয়া হয় ৪ বছর যাবৎ মাদ্রাসার ১০ ফুটের মধ্যে ইট ভাটা পরিচালনা হচ্ছে আপনি সংশ্লিষ্ট কোন কোন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এমন প্রশ্নে তিনি কুপোকাত, পরে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এবিষয়ে কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি কিছুক্ষণ সংযোগ থাকলেও পরবর্তীতে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন জানিয়েছেন, তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।