এসভি ডেস্ক: গেইল ঝড় নাকি আন্দ্রে রাসেলের ছক্কা উৎসব? কী দেখা যাবে আজ রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডাইনামাইটসের ‘অঘোষিত সেমিফাইনাল’ ম্যাচে? ম্যাচ শুরুর আগে এমন প্রশ্ন ও কৌতুহল ছিল হাজার হাজার দর্শক ও ভক্তদের মাঝে। কিন্তু ম্যাচ শেষে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট।
নাজমুল ইসলাম অপুর করা ১৭তম ওভারে পর পর তিনটি বলকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা নুরুল হাসানকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে মাতলেন রাসেল। দলের সতীর্থরাও এক দৌড়ে রাসেলকে এসে জড়িয়ে ধরলেন। মাঠে সাকিব বাহিনীর যখন এমন বুনো উদযাপন বিপরীতে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মাশরাফির রংপুর তখন নতমস্তকে ধীর পায়ে মাঠ ছাড়তে শুরু করে দিয়েছেন।
এতক্ষণে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন ম্যাচের ফলাফল কী হয়েছে। ২০ বল হাতে রেখেই রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের ষষ্ট আসরে ফাইনালে উঠে গেছে ঢাকা ডাইনামাইটস। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির ফাইনালে ঢাকার প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
গেল আসরের ফাইনালে ঠিক এভাবেই ঢাকাকে ৫৭ রানে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল রংপুর। আজ ঢাকার হয়তো শিরোপা জেতা হয়নি কিন্তু প্রতিপক্ষ শিবিরে এমন দাপুটে আঘাতে সাকিবদের সুখনিদ্রা সুনিশ্চিত।
এর আগে প্রথম ইনিংসে শুরুটা ভালোই করেছিল রংপুর। রংপুরের ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শোভাগত হোম। ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১২ বলে ২৭ রান করা নাদিফকে ফেরানোর পর রংপুরের দর্শকদের আশাহত করেন ক্রিস গেইল। দলীয় ৪২ রানেই রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের তালুবন্দি হন এই জ্যামাইকান দানব। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে মাত্র ১৫ রান।
এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রিলো রুশোও দাঁড়াতে পারেননি আজ। দলীয় ৪২ রানে তাকেও ফেরান রুবেল হোসেন। এর পর একে এসে হাওয়েল-মাশরাফিরা যখন যাওয়ার আসার প্রতিযোগিতায় মত্ত তখন একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে মোটামুটি সম্মানজনক স্কোর এনে দেন রবি বোপারা। ৪৩ বলে ৪৯ রানের সময় উপযোগী ইনিংস খেলেন রংপুরের এই ইংলিশ অলরাউন্ডার।
এদিন প্রত্যাশার সবটুকু চাপ ওপরে থাকলেও তা মেটাতে পুরোপুর ব্যর্থ হন গেইল। আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার রিলে রুশো ফিরেছেন শূণ্য রানে। ডেনি হাওয়েল করেছেন মাত্র ৩ রান করে। রান কিংবা জুটি বলতে যা বোঝায়- তা শুধু মাঝের সময়টাতে একটু দেখা মিলেছিল মোহাম্মদ মিঠুন আর রবি বোপারার ব্যাটে। আর এই হতচ্ছাড়া ব্যাটিংয়ে অঘোষিত সেমিফাইনালে ঢাকা ডাইনমাইটসকে মাত্র ১৪৩ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয় মাশরাফির রংপুর রাইডার্স।
এরপর ১৪৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নিজেদের শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছিল ঢাকা। দলীয় মাত্র ৪ রানে ইনফর্ম উপল থারাঙ্গা মাশরাফির শিকার হওয়ার পর ৪২ রানের মাথায় সুনীল নারিনকেও ফেরান নাজমুল ইসলাম অপু। চাপ বাড়াতে প্রতিপক্ষের ব্যাটম্যানদের সামনে সব চেষ্টাই করেছেন মাশরাফি। এরপর দলীয় ৭৫ রানে হাওয়েলের শিকার হন ২০ বলে ২৩ রান করা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
স্কোরবোর্ডে যখন ৯১ রান তখন মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার হন ৮ বলে ১৪ রান করা কাইরন পোলার্ড। তাতেই জমে উঠে ম্যাচ। সেই উত্তেজনার আগুনে ঘি পড়ে ২৪ বলে ৩৫ রান করা সেট ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার রান আউট হয়ে ফিরে গেলে।
একটা সময় ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারানো ঢাকার সামনেও জয়টা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু ঠান্ডা মাথার খুনি আন্দ্রে রাসেল আজ আর কোনও ভুলচুক করেননি। ধীর লগে শুরু করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান হার্ড হিটার। শেষ পর্যন্ত নুরুল হাসানের সঙ্গে ৫০ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে ঢাকার ফাইনাল নিশ্চিত করেন রাসেল।
ঢাকার হয়ে ৩.৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন দেশি পেসার রুবেল হোসেন।