জিএম জাকির হোসেন: ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্ণীতির সীমাহীন অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মহাসিন আলীর বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না।
সরেজমিনে যেয়ে জানা গেছে, বাঁশদহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগদান করার পর থেকে ভূমিকর্তা মহাসিন আলী সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্ণীতি শুরু করেছেন। বাংলাদেশ সরকার ভূমির খারিজের ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও তিনি ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। আর কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তিনি পাঁচগুণ টাকাও আদায় করছেন। চূড়ান্ত বিএস খতিয়ান আসার পরও দাগে সামান্য ভুল থাকলেও জমির মালিকদের কাছ থেকে নিজে এবং দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। কেউ টাকা না দিলে তিনি কোন কাজই করেন না এবং কাগজপত্র আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন। খাজনার চেকের জন্য তিনি কয়েকগুন টাকা নিয়ে থাকেন। ভিপি জমির নামজারির জন্য তিনি মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। ১৫০ ধারা ও ১৪৫ ধারায় আদালতে দায়েরকৃত মামলার রিপোর্ট বাবদ তিনি ইচ্ছামতো টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে না চাইলে তিনি বিপক্ষে রিপোর্ট দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া বাজারের পেরীফেরী জমিতে কেউ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইলে তারা গোপনে নায়েবের সাথে যোগাযোগ করেন এবং নায়েব মোটা অংকের টাকা নিয়ে পেরীফেরি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ করে দেন।
আইচপাড়া গ্রামের মৃত মানিক সরদারের ছেলে মোহর আলী বলেন, ‘গত ১৬ নভেম্বর আমি জমির খাজনা দিতে গেলে আমার কাছে অনেক টাকা দাবী করে। পরে আমি অনেক আকুতি মিনতি করলে তিনি আমার কাছ থেকে ২৯ শত টাকা গ্রহণ করেন এবং ২ টি রশিদ প্রদান করেন। একটা রশিদে মোট আদায় লেখা ছিল ৬৬৪ টাকা এবং অন্য রশিদে লেখা ছিল ১৪৬৫ টাকা। অর্থাৎ ২১২৯ টাকার রশিদ দিয়ে নায়েব মহাসীন আলী আমার কাছ থেকে নিয়েছেন ২৯০০ টাকা।’
বাঁশদহার রেউইবাজারের ব্যবসায়ী অহেদ আলী বলেন, ‘আমি খাজনা কাটতে গেলে তিনি আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবী করেন। আমি কম টাকা দিতে চাইলে তিনি আমাকে কয়েকদিন ঘোরান। তারপর বলেন, আমি এতো পরিশ্রম করছি, তাছাড়া অনলাইনেরও খরচ আছে। ২ হাজার টাকা না দিলে হবেনা। তারপর আমি এক মাধ্যমে কথা বলে ১০১০ টাকা তাকে দেই। তখন তিনি আমাকে ৯০৬ টাকার একটি রশিদ দেন। নায়েব এখানে যোগদান করার পর থেকে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্ণীিিত করে চলেছেন। তার কারণে আমরা অতিষ্ঠ।’
স্থানীয় যুবক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার রেউইবাজারে দোকান আছে। দোকানে এসে প্রত্যেক দিন বহু মানুষ এসে নায়েব মহাসীন আলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। বাঁশদহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসটাকে নায়েব মহাসিন আলী দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।’ কামারবায়সা এলাকার গোলাম মোস্তফা কয়েকজন দালালের সাথে নায়েবের আছে ঘনিষ্ঠ সখ্যতা। তাদের মাধ্যমে কাজ না করলেও তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
বাঁশদহা ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এমন হয়রানী আমার এলাকার মানুষ আর হয়েছে বলে মনে হয়নি। এই নায়েব যোগদানের পর থেকে সাধারণ মানুষ নানাভাবে সীমাহীন হয়রানী হচ্ছেন।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভূমি কর্মকর্তা মহাসিন আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ সত্য নয়।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলী বলেন, ‘সরকারী নির্দেশনার বাহিরে এক টাকাও নেওয়ার কোন বিধান নেই। যদি তিনি সরকারী নির্দেশনার বাইরে কিছু করেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’