Spread the love

অনলাইন ডেস্ক: পাচার চক্রের কবলে পড়ে দেড় মাস সৌদি আরবে বন্দী থাকা নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় গত ৬ মে সোমবার তাকে উদ্ধারের পর ৮ মে বুধবার দুপুরে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে গত ২ মে তার ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর মানব পাচারসহ জবরদস্তিমুলকভাবে দাসত্বকাজে বাধ্য করার অভিযোগে সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস নামীয় প্রতিষ্ঠনের ম্যানেজারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা করেন।

ভুক্তভোগী নারীর ভাই সালাউদ্দীন জানান, উচ্চ বেতনে ভাল চাকুরীর প্রলোভনে ফেলে গত ১৯ মার্চ সৌদি আরবে পাচার করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর পাচারচক্রের সদস্যরা স্থানীয় সহযোগীদের কাছে তাকে বিক্রি করে দেয়। এসময়ে ওই নারীকে নির্দিষ্ট একটি কক্ষে বন্দী করে কাজের নামে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি অসম্মতি প্রকাশ করলে তাকে মারপিটসহ খাইতে না দিয়ে অভুক্ত রাখা হতো।

সালাউদ্দিন অভিযোগ করেন সৌদি আরবে নেয়ার পর বিমানবন্দর থেকে পাচার চক্রের সদস্যরা তার বোনের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়। সরাসরি যোগাযোগ করতে না দিয়ে তার বোন ভাল রয়েছে বলে- পরিবারকে আশ্বস্থ করা হতো। একপর্যায়ে গত ১৬ই এপ্রিল দুপুরে অপর একজনের মোবাইলের সহায়তা নিয়ে হোয়াটসআপে তার বোন কান্নাজড়িত কন্ঠে বাঁচানোর আকুতি জানায়। এঘটনার পর বোনকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করলে সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস কতৃপক্ষ দুই লাখ টাকা দাবি করেন। অগত্যা বাধ্য হয়ে গত ২ মে তারিখে তারা পাচারের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাসেল আকন ও তাদের স্থানীয় এজেন্ট তাসলিমা, তার ছেলে মোস্তাফিজুরসহ অজ্ঞাত দুই/তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস এর মালিক মিজানুর রহমানকে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে অপর অভিযুক্ত তাসলিমা বেগম জানান, ঘটনার সাথে তিনি বা তার ছেলে জড়িত না। তার মাধ্যমে নারী সাথে সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস নামীয় প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করে। নারীর সাথে সৌদিতে খারাপ ব্যবহারের কথা জানতে পেরে তিনি তার পরিচিতদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করেছেন মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনতে।

এদিকে দেড় মাস ধরে তার উপর চলা ঘটনার বর্ননা দিতে যেয়ে ওই নারী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি জানান, সৌদিতে নেয়ার পর থেকে তার উপর অমানুসিক নির্যাতন করা হয়েছে। অসুস্থ হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ঔষধগুলো পর্যন্ত ফেলে দেয়া হয়। এমনকি প্রচন্ড ক্ষুধার পরও তাকে দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত থেকে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। তাদের কথামত কাজ না করলে প্রচন্ডভাবে মারধর করা হতো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোঃ হানিফ জানান, মামলা দায়েরের পরপরই মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় অক্ষত অবস্থায় দ্রুত সময়ে আটক নারীকে উদ্ধারে পাচার চক্রের সদস্যেেদর উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওই নারীকে উদ্ধারের পর শ্যামনগর থানায় নারী ও শিশু ডেক্সে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে ভুক্তোভোগী নারীর জবানবন্দী রেকর্ড হওয়ার পর উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের পরামর্শে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *