Spread the love

শেখ রিজাউল ইসলাম: সাতক্ষীরা শহরের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল খনন করে সাতক্ষীরা শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সরকার সম্প্রতি ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই খাল খননের প্রকল্প শুরু করে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকিতে ওই খাল খননের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রাঃ) লিঃ। খাল খননের শুরুতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলেও জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিনেরপোতা থেকে রসুলপুর কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় ৫.৭০ কিঃ মিঃ খনন কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।

তবে অবৈধ স্থাপনা, খালের দুই পাশের গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে রসুলপুর কবর স্থান হতে সাতক্ষীরা শহরাংশে খাল খননের কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে শহর অংশে খালের ধারের গাছগুলো কর্তনের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হলেও এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বন বিভাগ। ফলে সাতক্ষীরা শহরাংশে প্রাণ সায়ের খাল খনন বন্ধ রযেছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স(প্রাঃ) লিঃ এর নির্বাহী পরিচালক শেখ আবিদ হাসান সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় অতিদ্রুত ওই খাল খনন শুরু হয়েছিল। তবে ৮০০ মিটার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা, গাছপালা ও বৈদুতিক খুঁটির কারণে কাজটি আপাতত বন্ধ আছে। আমার প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে ৮ টি মাটি কাটার স্কেভিটর ও সংশ্লিষ্ট জনবল নির্বিকার বসে আছে। দৈনিক ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে শহরাংশের ওই অবৈধ স্থাপনা, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ না করা হলে আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব না।

বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকতা মারুফ বিল্লাহ সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে খালের ধারের গাছগুলো মারকিং করার জন্য আমরা চিঠি পেয়েছিলাম। সেই চিঠি অনুযায়ী আমরা খালের দুই ধারের গাছগুলো মারকিং ও করেছি। তবে গাছকাটা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিভাগ-১) এর এসও এম সাইদুজ্জান সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, প্রাণসায়ের খাল খনন কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আমাদের অবস্থান থেকে যা যা করা দরকার আমরা সবই করার জন্য চেষ্টা করেছি। তবে খালের ধারে অবৈধ স্থাপনা, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে করতে পারছেনা।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল সাতক্ষীরা ভিশনকে জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃকপক্ষকে কাজ করার জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি এবং তাদের বলেছি-সরকারি জায়গায় কাজ করার সময় কেউ বাঁধা দিলে আমাকে অবহিত করবেন। প্রয়োজনে কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর উদ্যোগে ১৮৬৫ সালে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ ও ২শ ফুট প্রশস্থ বিশিষ্ঠ এই খাল খনন করা হয়। খননের পর এই খালই হয়ে উঠেছিলো সাতক্ষীরা শহরের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। মাল আর যাত্রীবাহী বড় বড় নৌযান চলাচলে এক সময় দিনরাত ব্যস্ত থাকতো প্রাণসায়র। তবে ১৯৬৫ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে বেশ ক’টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। তারপর হতে শুরু হয় খালের দুই ধারের জমি অবৈধভাবে দখলের মহাৎসব। খালের ধারের অবৈধ স্থাপনা, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে ২শ ফুট খালের প্রশস্ত স্থানভেদে সর্বনিম্ন ২০ ফুটে নেমে এসেছে। বর্তমানে ওই খালের হারানো অতীত ফেরাতে ও সাতক্ষীরা শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে ওই খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *