এসভি ডেস্ক: টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীকে বিয়ের ছয় দিনের মাথায় তালাক দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সদর উপজেলার রসুলপুরের জামাই মেলায় ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে নাহিদুল ইসলামের (১৮) সঙ্গে তারাবাড়ি গ্রামের এক ভ্যানচালকের মেয়ের পরিচয় হয়।
পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। ৮ নভেম্বর শারীরিক সম্পর্কের সময় তাদের আটক করে এলাকাবাসী। ওই সময় জানা যায় কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা। আটকের পর ওই দিন রাতে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে গালা ইউনিয়নের কাজি আ. হাইয়ের মাধ্যমে দুই লাখ এক টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের পর পুত্রবধূকে পরে সময় করে ঘরে তুলবেন বলে কনের পরিবারের দায়িত্বে রেখে আসেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু বিয়ের ছয় দিনের মাথায় ১৩ নভেম্বর টাঙ্গাইল পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাজি হজরত আলীর সহায়তায় নববধূকে তালাকের নোটিশ দেন স্বামী। তালাকের নোটিশ পেয়ে অসহায় হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা নববধূ ও তার হতদরিদ্র পরিবার।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য, বিয়ের প্রলোভনে আমাকে বার বার ধর্ষণ করেছে নাহিদ। বর্তমানে আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় স্বেচ্ছায় আমাকে বিয়ে করে নাহিদ। পরে পরিবারের চাপে আমাকে তালাক দেয় সে।
কিশোরীর বাবা বলেন, বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। দুই দফায় তদন্ত করলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।
নাহিদের আত্মীয় ও কান্দুলিয়া গ্রামের মাতব্বর সিদ্দিক হোসেন বলেন, ওই বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে তালাকের নোটিশ দেয়া ঠিক হয়নি নাহিদের। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
নাহিদের মা নাসিমা আক্তার বলেন, বিয়ের পর মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তালাকের নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমার ছেলের বয়স কম, ছোট মানুষ। তাই ভুল করেছে সে।
গালা ইউনিয়নের কাজি আ. হাই বলেন, উভয় পরিবারের লোকজনের সম্মতিতে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছি। তবে মেয়ের বয়স প্রমাণের সুযোগ পাইনি। এ ধরনের বিয়ে আগেও রেজিস্ট্রি করেছি। কোনো ধরনের আইনি সমস্যা হলে তা দেখব আমি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাজি হজরত আলী বলেন, বিবাহিত পুরুষের যৌক্তিক কারণে তালাক দেয়ার অধিকার রয়েছে। একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭(১) উপধারায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ দিয়েছেন নাহিদ। এটা তালাক নয়, নোটিশ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, বিয়ে বা তালাকের মামলা হয় না। এসব বিষয়ে আদালতে মামলা করতে হয়। এরপরও ভুক্তভোগী পরিবারকে সহায়তা দিতে থানায় ধর্ষণ মামলা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। মামলা নেয়ার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।