এসভি ডেস্ক: ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চল অবস্থিত প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম ক্যানডিডো গডোই। সাত হাজার বাসিন্দার এই গ্রামটি অন্যান্য আট-দশটা গ্রামের মতো হলেও একটি কারণে এটি সবার থেকে আলাদা। সেটি হচ্ছে এখানে জমজ শিশুর জন্মের হার অবিশ্বাস্য রকমের বেশি।
ব্রাজিলে জমজ শিশু জন্মের জাতীয় গড়ের চেয়ে এই গ্রামের হার ১০ গুণ বেশি। তবে এই গ্রামে কেন এতো জমজ শিশুর জন্ম হয় তা কেউ জানে না। প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞের একটি দল গত কয়েক বছর ধরে এই গ্রামটির ওপর গবেষণা করছে। রহস্য উদঘাটনে গবেষকরা গ্রামের লোকজনের ডিএনএ সংগ্রহ করছে এবং পরিবারগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদকরা গ্রামটিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন জমজের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গ্রামের ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছেন। জমজ বোনদের একজন লুসিয়া গ্রোনিটজগি বলেন, এটা আমাদের জন্য খুব স্বাভাবিক। আমাদের স্কুলেও অনেক জমজ শিক্ষার্থী ছিল। আমাদের অনেক বন্ধুও জমজ ছিল, আমার চাচাতো ভাই-বোনেরা জমজ। তবে কেউ যদি জমজ না হয় তখনই দেখতে দৃষ্টিকটু লাগে। মনে হতো, এটিই ব্যতিক্রম।
কেউ জানেন না কেন এমনটা হয়। অনেকে মনে করেন এই গ্রামের পানিতে কিছু একটা আছে। যার কারণে জমজ হয়। তবে লুসিয়া বা তার বোন এটি মানতে নারাজ। তারা বলেন, আমরা সত্যিই ভীত। আমাদের মনে হয় না পানিতে কিছু আছে। এটা ভালো গল্প হতে পারে, তবে আমরা বিশ্বাস করি না। প্রতি দুই বছর পর পর এই গ্রামটিতে শতাধিক জমজদের অনেক বড় উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রাজিলের ক্যানডিডো গডোই গ্রামেই কেবল জমজের জন্মের এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটে না। ইউক্রেনের ভেলিকায়া কপানইয়া গ্রাম, নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা গ্রাম এবং দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রত্যন্ত কোডিনহি গ্রামেও এই অদ্ভূত ঘটনা ঘটে। এমনকি বিয়ের পর কোনও মহিলা এই গ্রামে এলে তিনিও জমজ সন্তান প্রসব করছেন।
কোডিনহি, ভারতের কেরালা রাজ্যের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। কিন্তু বর্তমানে এই গ্রাম বিশ্বজোড়া পরিচিতি পেয়েছে ‘জমজদের গ্রাম’ হিসেবে। বিজ্ঞানীরাও স্তম্ভিত এখানকার জমজদের ক্রমবর্ধমান জন্মহার দেখে!
গ্রামের রাস্তাঘাটে, খেলার মাঠে, স্কুলে বা অফিসে সর্বত্র জোড়ায় জোড়ায় মুখ দেখতে পাবেন। এমন অলৌকিকতায় চমকে যেতে বাধ্য।
স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তার স্কুলেই ১৭ জোড়া জমজ আসে প্রতিদিন। আবার খেলার মাঠে জমজ খেলোয়াড়দের নিয়েও দর্শকরা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিতে পড়েন। ব্যাপারগুলো যেমন মজার তেমনই আশ্চর্যের। কোচি বন্দরের মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে এই গ্রামে ঢুকে এমনই দেখবেন।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদন বলছে, গ্রামটিতে জমজ শিশু জন্মের এই ধারা শুরু হয়েছিল ৬০-৭০ বছর আগে। জমজের সংখ্যা এরপর ক্রমেই বাড়ছে।
দেখা গেছে, বিয়ের পর কোনও নারী এই গ্রামে এলে তিনিও জমজ সন্তান প্রসব করছেন।
স্থানীয় চিকিৎসক শ্রীবিজু জানিয়েছেন, পাশ্চাত্যের মতো এ গ্রামে সন্তান জন্মের জন্য কোনো কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। সাধারণত কম বয়সী নারীরাই প্রথমবারের মাতৃত্বে এমন জমজ সন্তানের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। আর গ্রামবাসীরা তো জমজ জন্মের এই ব্যাপারটিকে ‘ঐশ্বরিক আশীর্বাদ’ বলে ধরে নিয়েছেন।