নিজস্ব প্রতিনিধি: পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে রুকাইয়া এক গৃহবধূ ও তার প্রেমিককে পিটিয়ে ও শরীরে গরম তেল ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ইয়াসমিন সাথীর(১৯) বাবা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে সাতক্ষীরা থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার।
এদিকে ওই ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও ননদকে গ্রেপ্তার করেছে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান (ঋষিপাড়া) এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে ও নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী নয়ন হাসান রাব্বি (২৪), শ্বশুর মৃত নলিম শেখ এর ছেলে আব্দুল বারী (৫২) ও ননদ আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের আজমল হোসাইনের স্ত্রী নাসরিন সুলতানা সুমি (২৭)।
মামলার বাদী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী আশাশুনি গুনারাকাঠি মাদ্রাসায় আলিম ২য় বর্ষে লেখাপড়া করে। একই মাদ্রাসায় লেখাপড়ার সুবাদে কচুয়া গ্রামের আবু হানিফ সরদারের ছেলে মোঃ হাবিবুল্লাহ আমার মেয়ের বন্ধু। সেই হিসেবে তাদের মধ্যে মোবাইলে কথা হত। শনিবার বেলা সোয়া ১০ টার দিকে আমার মেয়ের বন্ধু আব্দুল্লাহ লেখাপড়ার বিষয়ে মেয়ের সাথে কথা বলতে জামাইয়ের বাড়ীতে যায়। পরে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের দু’জনকে আটক করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এ সময় মেয়ের সর্বাঙ্গে গরম তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।’
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘গৃহবধূ রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীসহ তার বন্ধু মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল্লাহকে নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় ৬ জনকে আসামী করে গৃহবধূর বাবা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মোঃ নয়ন হাসান রাব্বি, শ্বশুর মোঃ আব্দুল বারী ও ননদ নাসরিন সুলতানা সুমিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
তবে শহরের রাজারাবাগান ঋষিপাড়া এলাকার আব্দুল বারি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে জানিয়েছিলেন, ‘সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের পাশে সম্প্রতি বাড়ি করে সেখানে স্বস্ত্রীক আমি বসবাস করি। ছেলে রাব্বি ও পুত্রবধু সাথী রাজারবাগানের বাড়িতে থাকে। রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী গুনাকারকাটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করার সময় আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের আব্দুল হানিফের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুল্লার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। হাবিবুল্লাহ বর্তমানে যশোরের আনছার ক্যাম্পের পাশে থেকে একটি কারখানায় কাজ করে। এ কারণে মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মাঝে মাঝে প্রেমিকা সাথীর সঙ্গে দেখা করতে সাতক্ষীরায় আসতো। এ নিয়ে তার ছেলে রাব্বির সাথে পুত্রবধু সাথীর ঝগড়া হতো। এর জের ধরে দুইমাস আগে সাথী বাপের বাড়িতে চলে যায়। রাব্বি ১০দিন আগে তাকে বাড়িতে আনে। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাব্বি বাড়িতে না থাকার সুযোগে হাবিবুল্লাহ সাথীর সাথে দেখা করতে আসে। ঘরের মধ্যে তারা অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুললে স্থানীয়রা রাব্বিকে খবর দেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অফিসে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনার সত্যতা মেলে। পরে দু’জনকে মারপিট করা হয়।’