নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি। সেই সাথে বেড়েছে রাজস্ব আদায়। গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে পৌনে ৩০০ কোটি টাকা। ভারতের কলকাতার সাথে ভোমরা স্থল বন্দরের দূরুত্ব কম, দূর্নীতির বিরুদ্বে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করার কারণে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৯০৭.৫৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যেখানে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২৭৫.৮৬ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্বির হার ৪৩.৬৭ শতাংশ। দিন দিন রাজস্ব বৃদ্বির কারনে এই বন্দরে আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পাশ্ববর্তী বেনাপেল বন্দরের একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বানিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তর ও পত্রপত্রিকায় ভূল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ প্রচার করে ভোমরা বন্দর ও বন্দর সংশিলিষ্ট কতৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভোমরা স্থলবন্দরের জমি অধিগ্রহনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। অচিরেই, কাষ্টম হাউজ, শেড, ইয়ার্ড, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অনান্য অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ সকল ধরনের পন্য আমদানির কার্যক্রম পুরোদমে ব্যবসায়ীরা শুরু করলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে বলে জানিয়েছে কাষ্টম কতৃপক্ষ।
খোজখবর নিয়ে ও সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর করা হয়। দীর্ঘ দিন ব্যবসায়ীদের দাবির মূখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যয় দুধ ব্যতিত আমদানিকৃত সকল পন্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাষ্টমস্ ও কলকতার দূরুত্ব বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৫ কিলোমিটার কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই বন্দরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দূরুত্ব কম, পন্যপরিবহনে ফুয়েল শাশ্রয় ও সময় বাঁচার কারনে ব্যবসায়ীরা অতি কম সময়ের মধ্যে ভোমরা বন্দর থেকে রাজধানি ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পন্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে আমদানিকৃত আপেল, আঙ্গুর, আনার, টমেটো, কাঁচামরিচ, পিয়াজ মাছসহ সকল ধরনের পচনশিল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সময় কম লাগায় ব্যবসায়ীরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে ভোমরা বন্দরে। যে কারনে পাশ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুকছেন। এখানে পাশ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের মত ফলের ট্রাক থেকে শুরু করে সকল ধরনের পন্যবাহি ট্রাক ডিজিটাল স্কেলে নিক্ষুত ভাবে পরিমাপ করে রাজস্ব নিধারণ করা হচ্ছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ গত অর্থ বছরে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ৬২৭টি এবং ২০২৩-২০২৪ চলতি অর্থ বছরে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮০টি। যা গত অর্থ বছরের তুলনা চলতি অর্থ বছরে রপ্তানিকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৬৫%। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৬৩ হাজার ৯০২টি, যা গত অর্থ বছরে ছিল ৮২ হাজার ২২৮টি। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম এসেছে ১৮ হাজার ৩২৬টি।
অপর দিকে গত অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমান ছিল ৩০ লক্ষ ৯ হাজার ৯৫৫ মে. টন এবং চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ২৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬২ মে. টন। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্য কম হয়েছে ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থান। দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যসহ আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে উক্ত স্থলবন্দর দিয়ে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড় ৫০ থেকে একশত পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ জন পার্সপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বানিজ্যে ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভিতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বানিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য সড়যন্ত্র শুরু করেছে। গত ২০ সেপ্টম্বর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরে এ্যানালক স্কেলে পন্যবাহি ফলের ট্রাকের ওজন পরিমাপের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলে ভূল তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। যে খানে জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিজিএফআই ও কাস্টমস্ কতৃপক্ষের উপস্থিতিতে সম্পুর্ণ ডিজিটাল স্কেলে সকল ধরনের পন্য পরিমাপ করা হয়। কোন আমদানিকারকের ওজন ফাঁকির কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারা আরও জানান ভোমরা সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভোমরা স্থল বন্দর নিয়ে সড়যন্ত্রমূলক প্রকাশিত নিউজের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এছাড়া কাস্টমস হাউজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা সব ধরনের পণ্য আমদানির কার্যক্রম শুরু করলে এই বন্দরে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
ভোমরার স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরিক্ষণ) বাবলুর রহমান জানান, এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সকল পন্য পরিবহনের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাষ্টমস্ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে ওজন শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।