Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৫০ মাস যাবৎ সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১৩ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটকে সমাপ্ত স্টেপ প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন দীর্ঘ ৫০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। 

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (ট্রেক) এনভায়রনমেন্ট শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. মোসফেক আলী, প্রতিষ্ঠানটির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক মো.রায়হান কবির রনি, মো. মুমিনুল ইসলাম, নিশিতা তাছনিম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কোনো বেতন ছাড়াই আমরা ১৩ জন শিক্ষক ৫০ মাস ধরে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছি। এতদিন ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে আমরা নিকট আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও টাকা ধার করতে পারছি না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং সন্তানের ভরণপোষণের আর কোনো উপায়ই দেখছি না। অনেক শিক্ষকের শিশুসন্তানের দুধ কেনারও পয়সা নেই।

বক্তারা আরও বলেন, বেতন বকেয়া ও বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এভাবে বেতন বন্ধ থাকলে ক্লাস কিভাবে চলবে। তাই আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে ক্লাস যেন নিতে পারি সেজন্য প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ তীব্র শিক্ষক সংকটে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা যখন অচলাবস্থা এমতাবস্থায়, ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই ধাপে সরকারি ৪৯ টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ শূন্য পদের বিপরীতে (প্রকল্প মেয়াদে) মোট ১০১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় যার মধ্যে বর্তমানে কমরত আছে ৭৩৮ জন শিক্ষক। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ নুন্যতম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার আলোকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্টেপ প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই যোগ্যতা এবং প্রযোজ্য সরকারি বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ, সিভিল সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়। “স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট” প্রকল্পটির মেয়াদ দুই ধাপে বৃদ্ধি করে ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত হয়।

আরও বলেন, স্টেপ প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১% যা বর্তমানে ২২% এ উন্নীত হয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছ। স্টেপ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক বর্তমানে কর্মরত ৭৩৮ জন দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তীব্র শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে ২২/০৫/২০১৯ খ্রি. তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সমাপ্ত স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষকদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। স্টেপ প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহত রাখার স্বার্থে ৩০ জুন ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশে (স্টে অর্ডার) উক্ত শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) শিক্ষক তাঁরা। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরকার এই শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্থানান্তর না হওয়ায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে তাঁরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *