নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা মহাশশ্মান সংলগ্ন বেতনা নদীর প্রায় ৩০ ফুট বেঁড়িবাধ ভেঙে নিম্নাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের বিনেপোতা, রাজনগর, শিবনগর, এগারোআনি এবং তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের নিমতলা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা ও হরিন খোলার নিম্নাঞ্চল।
এছাড়া গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার পৌর এলাকার গদাইবিল, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, মধুমোল্লারডাঙ্গী, রাজার বাগান, মুন্সীপাড়া, রথখোলা, কাটিয়া, সুলতানপুর, বাঁকাল, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনীসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল। বেঁড়িবাধ ভেঙে ও টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমিসহ নিম্নাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকা। বেড়িবাধ ভাঙন কবলিত এলাকায় সড়কের উপর জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হচ্ছেন না। এদিকে, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী।
লাবসা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বিশ্বনাথ মন্ডল জানান, বেতনা নদীর বঁড়িবাধ ভেঙে সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের বিনেরপোতা, রাজনগর, শিবনগর, এগারোআনি ও তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের নিমতলা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা ও হরিন খোলার নিন্মাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসার আনিছুর রহমান জানান, অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৫ হাজারের বেশি মৎস্য ঘের ও ৩ হাজারের বেশি পুকুর। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে বলে তিনি আরো জানান।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে সাতক্ষীরায় গত তিন দিনে ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরে এ জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আগামিকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে তিনি আরো জানান।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বেতনা নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেঁড়িবাধের দুটি স্থানে ভেঙে গেছে। যা মেরামতের জন্য বাঁশ ও জিও ব্যাগসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ম্যানেজ করা হয়েছে আবহাওয়া অনুকুলে আসলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ শোয়াইব আহম্মেদ জানান, গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে সদর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে পানির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। বেতনা নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখন বলা যাচ্ছেনা। পরে এটা নিরুপন করা হবে।