Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের সাথে সাথে খুলনা পাইকগাছা উপজেলা ৬নং লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন পলাতক রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে বিধি মোতাবেক ছুটিও গ্রহন করেননি তিনি। দীর্ঘ দিন চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যানদের মধ্যে থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যার ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। কি কারনে প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব না দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে তার সঠিক কারন জানতে না পেরে ক্ষুব্ধ ইউনিয়ন বাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৬ নং লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন গত ০৫ আগষ্টের পর থেকে পালিয়ে আছেন। ইউনিয়ন পরিষদে আসাতো দুরের কথা নিজ এলাকায়ও তারা দেখা মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি একবার সতন্ত্র প্রতিকে নির্বাচিত হন। পরে দুইবার নৌকা প্রতিক নিয়ে তিনি ভোট ডাকাতি করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রথম মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর কিছুটা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও বাকি দুই বার নৌকা প্রতিক বাগিয়ে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদে বসে হয়ে পড়ে জন বিছিন্ন। জড়িয়ে পড়েন নানা অনিয়মের সাথে। তুহিন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাইকগাছা থানা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদিকে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান অন্যদিকে থানা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কারনে নিজেকে ইউনিয়ন পরিষদের একচ্ছত্র অধিপতি ভাবতে শুরু করেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কাজ না দিয়ে অধিকাংশ কাজ নিজে হাতে করেন। সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজ করে তার সৌজন্য বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তুহিনের বিরুদ্ধে। সবশেষে গত ৪ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য রশিদুজ্জামান মোড়লের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের উপরে যে বর্বর হামলা করা হয় সেখানে সশরীরে কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন তার বাহিনী নিয়ে হামলা করে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ এনে থানায় মামলা করা হয়েছে। এমনকি হামলাকারী অন্যান্য নেতাদের সাথে কে মারিফুজ্জামান তুহিনের ছবি দিয়ে প্যানা বানিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবিতে উপজেলা বিভিন্ন স্পটে ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

এসব অভিযোগ তুলে ধরে গত ২২ আগস্ট লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কে এম আরিফুজ্জামান তুহিনের বরখাস্তের দাবীতে মানববন্ধন করে করেন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

এবিষয়ে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহন কারী প্রার্থী সাফায়ত হোসেন সোহাগ জানান, কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন গত ইউনিয়ন পরিষদ ভোটে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর পূর্বক লস্কর কেন্দ্রের ভোট ডাকাতি করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এমনকি ভোটের তিন দিন আগে সরাসরি তুহিন তার বাহিনী নিয়ে আমার কর্মীদের উপর হামলা করে ৯ টা মোটরসাইকেল ভাংচুরসহ আমাদের দশ জন লোককে আহত করে।

লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম গাইন বলেন- তুহিনের অপকর্মের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। ভোট ডাকাতি করে চেয়ারম্যান হওয়ার পর যা খুশি তাই করেছে। ইতোমধ্যে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে মানববন্ধন করেছে।

পলাতক থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছুটি না নিয়ে এতদিন অনুপস্থিত থাকলে তার চেয়ারম্যানের পদ বহাল থাকার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

অপরদিকে গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর থেকে ছুটি না নিয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন। একটা দিনের জন্যও ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করাতো দুরের কথা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জানেন না তার পরিষদের কেউ। দীর্ঘ দিন চেয়ারম্যানের উপস্থিত না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আইননুসারে প্যানেল চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া কথা থাকলে এখনো কেউ দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়নি।

এবিষয়ে ০৬ নং লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের ০১নং প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সানার আলাপকালে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ৫ তারিখে পর থেকে অদ্যবদি নিখোঁজ। এসময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া কথা থাকলেও এখনো কোন নির্দেশনা মূলক চিঠি আমরা হাতে পাইনি।

লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। খুব দ্রুতই কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানান তিনি।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। দ্রুততার সাথে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাদের কাছে রেজুলেশন আকারে পাঠালে আমরা সমস্যার সমাধান করে ফেলব। চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন ৫ আগস্ট থেকে একদিনও অফিস করেননি তাহলে তিনি কি ছুটি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন জবাবে তিনি বলেন-অদ্যবধি পর্যন্ত কে এম আরিফুজ্জামান তুহিনের ছুটির কোন দরখাস্ত আমরা পাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *