দেবহাটা প্রতিনিধি: জেল, জরিমানা কোন কিছুই থামাতে পারছে না দেবহাটার নাংলা ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশারকে। শিক্ষার্থী নয় এমন এবং একই ছাত্রীদের দিয়ে বার বার পরীক্ষা দিয়ে এমন জালিয়াতি করে এমপিও ছাড়সহ বোর্ড পরীক্ষা সম্পন্ন করেন প্রতিষ্ঠানের সুপার বাশার। আর তাই এবারের দাখিল পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী সাজিয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব কাজে একাধিক বার জেল ও জরিমানা দিয়েও থামেনি তার অপকর্ম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০২৩ সালে এমপিও হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ১২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী সরকারি বিধি মোতাবেক বেতনভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু অভিযোগ আছে, যে সব শিক্ষার্থী দেখিয়ে এমপিও’র ছাড় করা হয়েছে। তা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারই সত্যতা মিলেছে এবারের দাখিল পরীক্ষায়। ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৮ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দিনে ৭ জন উপস্থিত ছিল। ২য় ও ৩য় দিনের পরীক্ষায় ওই ১৮ জনের একজনও অংশ নেয়নি। পরে বিষয়টি খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অভিযুক্ত আবুল বাশার উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের জিয়াদ আলীর ছেলে ও ঘোনাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার। ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর ঘোনাপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশার জালিয়াতি করে এবতেদায়ী পরীক্ষায় ৯ ভুয়া পরীক্ষার্থীসহ ধরা পড়ে। ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরে শতাধিক বাল্যবিয়ে দেওয়ার অপরাধে ম্যারেজ রেজিষ্টার ও মাদ্রাসা সুপার আবুল বাশার গ্রেফতার হন। এছাড়া চেক জালিয়াতি মামলায় বেশকিছুদিন আগে দেবহাটা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে সে ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সাত্তারকে কৌশলে সরিয়ে নিজে ওই পদ দখল করেন। এরপর পুরাতন শিক্ষকদের পরিবর্তে নতুন শিক্ষক নিয়োগের নামে চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসানো, শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ বিক্রিসহ অসংখ্য জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে আবুল বাশারের বিরুদ্ধে।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রাখি জানান, গত বছর ২০২৩ সালে সে দশম শ্রেণিতে পড়াকালে পাখি নামে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এবছর নিজে পরীক্ষার্থী হয়েও সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। রেজিস্ট্রেশনের অজুহাতে তাকে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি বলেও অভিযোগ করেছে সে।
আর এক শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন জানান, শুধু সে নয় তার মত তাদের বান্ধবী আয়েশা, মাসুমা ও শারমিন এবছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। মাদ্রসার সুপার পরীক্ষার কয়দিন আগেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আশা দিলেও শেষ পর্যন্ত একদিন আগে ক্ষমা চেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বলে জানান।
আফসানা মিমি ২০২৩ সালে ভর্তি হয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে জানান, বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার পর গতবছর সে নতুন করে শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর প্রথম দিন পরীক্ষায় অংশ নিলেও ২য় পরীক্ষায় ভয়ে অংশ নেননি তিনি।
কুলসুম নামের এক নারী জানান, তিনি ২৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তবে পরীক্ষার প্রবেশপত্র তার কাছে নেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের হাতে থাকা প্রবেশপত্র সুপারকে দিয়ে দিতে হয়।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় সামছুর রহমান বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানান, মাদ্রাসার সুপার এমপিও করার পূর্বে পুরাতন শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছে। সে খুব ধুরন্ধর হওয়ায় বার বার অপরাধ করেও অদৃর্শ্য শক্তির বলে পার পেয়ে যান।
এদিকে, মাদ্রাসার সুপার আবুল বাশারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল হামিদ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। ২য় দিনের পরীক্ষায় কেউ অংশ না নেওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিষয়টির সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।