শনিবার, ১৪ Jun ২০২৫, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
মা/দক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় হা/ম/লা! প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন সাতক্ষীরায় জামায়াতের রুকন প্রার্থী শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত ব্রহ্মরাজপুরে ইমামদের ঈদ পূণর্মিলন ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা তালায় মানব উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ঈদ অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব আ.লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন আজমকে গোপালগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর ধুলিহর ব্রহ্মরাজপুর সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদ পুণর্মিলনী খালেদা জিয়ার জন্য ‘কালো মানিক’ নিয়ে ঢাকায় ভক্ত সাতক্ষীরার ৩৬ শহীদ পরিবারের মাঝে জামায়াতের উপহার বিতরণ ৩৫০জন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের মাঝে ঈদ সামগ্রী তুলে দিলেন গোপালগঞ্জের ডিসি

দুই ছাত্রীকে বিয়ে করে বিতাড়িত শিক্ষক আবারো ফিরলেন কলেজে! সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাজীরহাট কলেজের দুই ছাত্রীকে বিয়ে করে কলেজ থেকে বিতাড়িত হন ইংরেজী প্রভাষক সিদ্দিকুর রহমান। তবে প্রায় দুই বছর পর কলেজে নিয়মিত শিক্ষক ও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষসহ এডহক কমিটির কতিপয় সদস্য।
অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষার্থী ও অধিকাংশ শিক্ষকের মতামত উপেক্ষা করে ওই শিক্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ও আর্থিক লেনদেন করে কলেজের অধ্যক্ষসহ কতিপয় সদস্য সিদ্দিকুর রহমানকে আবারো কলেজে ফিরিয়ে এনেছেন। ওই ঘটনায় কলেজের অভ্যন্তরে শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। বইছে সমালোচনার ঝড়। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে হলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
সোমবার(১৯ মে) দুপুর ১২ টার দিকে কলেজ চলাকালীন সময়ে কলারোয়া উপজেলার কাজীরহাট কলেজে সরেজমিনে গেলে ইদ্রিস আলীসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, ২০১৫ সালে কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান অত্র কলেজের ডিগ্রি সেকশনে ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজী প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। কয়েক মাস যেতেনা যেতেই তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে।
ফলে তার ভয়ে কিছু ছাত্রী পাশ্ববর্তী কাজীরহাট বাজারে অন্য শিক্ষকের নিকট পড়তে যাওয়া শুরু করে।
তারা আরো বলেন, কলেজে প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে সিদ্দিকুর রহমান কলেজের এক
ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। প্রেমের সম্পর্কের জেরে কলারোয়া বাজারের বৈশাখীতে ওই শিক্ষকের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে একান্তে সময় কাটাতেন। তবে প্রায় দুই বছর পর ওই ছাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি না হলে ওই ছাত্রী কয়েকজন শিক্ষককে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানান। এরপর কলেজের অধ্যক্ষ এস এম সহিদুল আলম ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে বিষয়টি দুই এক দিনের মধ্যে মিমাংসা করে নিতে বলেন। মিমাংসা করতে না পারায় কয়েকদিন পরেই কলেজ অধ্যক্ষ উভয় পরিবারের সাথে আলোচনান্তে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ওই বিয়েতে দাওয়াতী মেহমান হিসেবে ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ এসএম শহিদুল আলম, শিক্ষক সাহাদাৎ হোসেন, আশিকুর রহমান, আনিছুর রহমান, ইদ্রিস আলী, শাহানুর রহমানসহ আরো অনেকে।
তবে বিধি বাম। বিয়ের কয়েক মাস পরই সিদ্দিকুর রহমান স্ত্রীকে তালাকনামা পাঠান। তালাকের বিষয়টি জানতে পেরে কলেজের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ওই শিক্ষকের কাছে বিষয়টির সত্যতা জানতে গেলে তিনি শিক্ষকদের সাথে দেখা না করে চরম অপমান করেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা কয়েকজন শিক্ষককে স্বাক্ষী করে যশোর আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালীন সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে কলেজের নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে ও ক্লাস করার অনুমতি দেন।
শিক্ষকরা আরো বলেন, ক্লাস করার কয়েক মাসের মধ্যেই কুশোডাঙ্গা গ্রামের জনৈক এক যুবকের স্ত্রী এবং কাজিরহাট কলেজের নিয়মিত আর এক ছাত্রীর সাথেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি অল্প দিনেই জানাজানি হলে কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা গোপনে তাকে সাবধান করে দেন।
তবে তাদের দ্বিতীয় প্রেম থেমে থাকেনি। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষার দিন সকালে কলারোয়া বাজারের তুলশীডাঙ্গা গ্রামের কাজী পাড়ায় তার প্রাইভেট সেন্টারে ওই ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগে স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে মেয়েটির পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতায় ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে সে যাত্রায় রেহায় পান।
এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ইংরেজী শিক্ষক সিদ্দিকুরকে কলেজে না যাওয়ার জন্য জানিয়ে দেন। পরে দ্বিতীয় প্রেমিকাকে দিয়ে তার স্বামীকে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করেন সিদ্দিকুর রহমান।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কলেজের এডহক কমিটির কতিপয় সদস্য, হিতৈষী ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন। এরপর তার কাছ থেকে মুচলিকা নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর আবারও কলেজের নিয়মিত শিক্ষক ও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেন। এতে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, এডহক কমিটির সভাপতি পদত্যাগ করেছেন। সেই কমিটির আর কোন ক্ষমতা থাকে কি করে?
কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ইদ্রিস আলীসহ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সবই সঠিক। তবে ওপরের চাপে স্টাম্পে লিখিত মুচলিকা নিয়ে এবং ১ বছর পর্যবেক্ষনে রাখাসহ বিভিন্ন শর্তের বিনিময়ে তাকে কলেজে আসা এবং ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহিমসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ওই শিক্ষককে চিনি না। আমরা এক বছর ধরে ওই শিক্ষকের কোন ক্লাস করিনি। আমরা শুনেছি ওই স্যারের চরিত্র ভালো না। গত রবিবার থেকে দেখছি কলেজে উনি আসছেন। উনি আমাদের ক্লাস নেওয়ার জন্য গেছেন কিন্তু আমরা তার ক্লাস করিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। অধ্যক্ষ স্যারের কাছে শোনেন। আমার বাচ্চা অসুস্থ। আমি বাড়ি যাচ্ছি। পরে কথা বলবো।
কাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ এস এম সহিদুল আলম বলেন, সিদ্দিকুর রহমান যোগদান করেছেন ২০১৫ সালে। বিশেষ একটি কারণে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবক কোন অভিযোগ না দেওয়ায় তাকে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে আসা বা ক্লাস করতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তাকে ক্লাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
প্রভাবিত হয়ে এবং আর্থিক লেনদেন করে তাকে ক্লাস করানোর অনুমতি দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কাল্পনিক। এর কোন বাস্তবতা নেই। আমরা শিক্ষক। আমরা এসব কাজ করিনা।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্টটি শেয়ার করুন

©All rights reserved© SatkhiraVision.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com