শনিবার সকালে সরেজমিনে গেলে পাইকপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব বাবুরালী গাজীর ছেলে জামাল ফারুক বলেন, ২০০৫ সালে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থানাধীন জগন্নাথপুর (বড়) মৌজার অন্তর্গত এস.এ ২৩২ আর.এস ৪৬৩ খতিয়ানে সাবেক ২৭৮৪ দাগে বি.আর.এস ৫৮০৩ দাগে ২.২১ শতক জমি মোঃ কলিম উদ্দীন গাজীর কাছ থেকে ক্রয় করি। এরপর আমরা খাজনা পরিশোধ করে ওই জমিতে থাকা মন্দিরের জমি বাদ দিয়ে অন্য জমিগুলো ভোগদখল করিতেছিলাম। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পূর্বে আমাদের ক্রয়কৃত ওই জমি জনৈক শ্রী সুভাস রায় দুই বছরের জন্য আমাদের কাছ থেকে লিজ/হারী নেন। প্রতি সনে তিনি লিজ/ হারীর টাকা বুঝাইয়া দেন। মেয়াদ শেষে মৃত সতিষ চন্দ্র রায়ের ছেলে শ্রী প্রভাষ রায় আমাদের সাথে চুক্তিতে আসেন এবং জমি হারীহারা মতে দখলে নেন। অতপর এক বছরের হারীর টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে মৃত শুধীর চন্দ্র রায়ের ছেলে হিরুলাল রায়, মৃত মুরারী মোহন রায়ের ছেলে অনিমেষ কুমার রায়, মৃত দেবদাস কুমার রায়ের ছেলে বিধান চন্দ্র রায়ের যোগসাজসে কয়েক বছর হারীর টাকা পরিশোধ না করে জোর পূর্বক ভোগ-দখল করে আসছে। আমরা তাদেরকে বারবার তাগাদা দিলে তারা জমি বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তালবাহানা শুরু করেন এবং বিগত আ.লীগ সরকারের প্রভাবশালী লোকদের দিয়ে হুমকি ধামকি দেন। আমরা একটু চাপ প্রয়োগ করলেই তারা মন্দির ভাংচুরের মামলা দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দিতে থাকেন। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দীর্ঘদিন ওই জমি দখল করতে পারিনি। পরবর্তিতে ২০২৪ সালে দুপক্ষের আপোষ মিমাংসা হয় এবং তারা হারীর টাকা দেবে বলে স্বীকার করে। তবে আবারও হারীর টাকা চাইতে গেলে বা জমির দখল ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে টাল বাহানা শুরু করে। এ কারণে ২০২৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিকার চেয়ে দরখাস্ত দাখিল করি। চেয়ারম্যান দিন ধার্য করলে ১ম তারিখে তারা হাজির হয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন। তবে পরবর্তীতে দুইবার চেয়ারম্যান দিন ধার্য করলেও তারা আর হাজির হননি। এরপর চেয়ারম্যান কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ চেয়ারম্যান আমাদের পক্ষে একটি প্রত্যায়ন পত্র প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের ওই প্রত্যায়ন পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, যেহেতেু আমাদের জমিতে একটি মন্দির আছে সেহেতেু পূজা অর্চনার ব্যাপারে কোন বাধা দেওয়া হবেনা বা আপত্তি থাকবেনা। মন্দির এবং মন্দিরের পূজা অর্চনার জন্য যতটুকু জমি প্রয়োজন হয় স্থানীয়ভাবে বসে সকলের সম্মতিতে ততটুকু জমি আমরা ওয়াকফ করে দেবো।
জামাল ফারুক আরো বলেন, আমরা দেবহাটা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। এটি জানার পর গত বৃহস্পতিবার প্রভাস কুমার রায়সহ অন্যান্যরা মন্দিরের বাহিরে বাঁশের বেঁড়া ছাড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দেওয়া শুরু করেছে।
অত্র এলাকার কালাম, মহিদ, আমিরুল, এলাহীসহ অনেকেই বলেন, মন্দিরসহ পাশের ঘেরের জমি জামাল ফারুকদের। পূর্বে অল্প জায়গায় বাঁশ ও বেড়া দিয়ে ঘিরে পূজার্চনা করতেন প্রভাস গং রা। ৫/৭ বছর পূর্বে পাকা স্থাপনা দিয়ে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে জামাল ফারুকরা মন্দিরের জমি ওয়াকফ করে দিতে চাইলেও একটি কুচক্রি মহল এটা নিয়ে নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। তারা আমাদের এলাকায় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা করছেন। এ কারণে তারা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসাবসি করে বিষয়টি সমাধান না করে প্রভাস রায়সহ কতিপয় ব্যক্তিকে উস্কানি দিচ্ছেন।
এদিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ রায় বলেন, ‘আমাদের কাছে মন্দিরের ওই জমির কোন কাগজপত্র নেই। তবে দীর্ঘদিন আমরা ওই জায়গার ওই মন্দিরে পূজার্চনা করছি। আমাদের মন্দিরের কোন কাগজপত্র আছে কিনা বা মামলার কারণে আদালতে জমা দেওয়া আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।’
দেবহাটা থানার ওসি হযরত আলী বলেন, ‘ওই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’