সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের ইউছোপ মোল্লার মেয়ে ও মৃত লিয়াকত সরদারের স্ত্রী আকলিমা খাতুন বাদি হয়ে ২১ জানুয়ারী (মঙ্গলবার)সাতক্ষীরার দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩, এর ৫এর (৫) ধারা তৎসহ দ-বিধির ৩৮৫/৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ি উপমহাপুলিশ পরিদর্শক খুলনাকে উল্লেখিত আইনের বর্ণিত ধারার আলোকে অভিযোগের বিষয়ে তিনি নিজে অথবা অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নীচে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার মাধমে তদন্ত করে আগামি ২১ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক, সদর থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবুল কালাম আাজাদ, একই থানার সাবেক সহকারি উপপরিদর্শক আব্দুল মালেক, সাতক্ষীরা সদরের তলুইগাছা গ্রামের মৃত জব্বার সরদারের ছেলে আব্দুল খালেক ওরফে খাটাল খালেক এবং বাঁশদহা কাজীপাড়া গ্রামের কামরুল শেখের ছেলে শরিফুজামান বিপুল।
মামলার বাদি আকলিমা খাতুন তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তার স্বামী লিয়াকত সরদার একজন গরু ব্যবসায়ি ছিলেন। তার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন ৬নং আসামী আব্দুল খালেক। আব্দুল খালেক গরু গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করতেন। বিক্রি শেষে তারা টাকা বন্টন করে নিতেন।
আব্দুল খালেক গরু চালানের বিষয়ে সমস্ত তথ্য ৭নং আসামী বিপুলকে দেয়। বিপুল বিষয়টি সোর্স হিসেবে তৎকালিন সাতক্ষীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হককে অবহিত করেন। এমদাদুল হকের নির্দেশে উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও সহকারি উপপরিদর্শক মালেক ২০২০ সালের ১৬ জুলাই দুপুরে লিয়াকতের বাড়িতে যেয়ে গরু বিক্রিকে অনেক লাভ করেছিস বলে লাভের কমিশন হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করার জন্য ১০ লাখ টাকা নিয়ে দেখা করতে বলেন।
নতুবা তার জীবন হারনোর হুমকি দিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আব্দুল খালেক ভিকটিম লিয়াকতের বাড়িতে আসে। আসামী বিপুলের সঙ্গে কথা বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে দফারফার পরামর্শ দেয়। সন্ধ্যায় খালেক ও লিয়াকত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে। ভিকটিম ৫০ হাজার টাকা বিপুলকে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলেন।
১৮ জুলাই সন্ধ্যায় উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও সহকারি উপপরিদর্শক মালেক ভিকটিম লিয়াকতকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেখা করতে বলেছে মর্মে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। রাতে ভিকটিম বাড়িতে না ফেরায় বাদি ১৯ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। তাকে কোথাও না পেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয় দেখবেন মর্মে আশ্বস্ত করে সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কাছে পাঠানো হয়।
পরে বাদি ও সাক্ষীরা বাড়িতে চলে যায়। ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসামী উপপরিদর্শক কালাম ও সহকারি উপপরিদর্শক মালেক বাদির বাড়িতে যেয়ে ক্রসফায়ারের হাত থেকে ভিকটিমকে বাঁচাতে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা যোগাড় করার জন্য বাদি সময় চাওয়ায় আবুল কালাম ও আব্দুল মালেক চলে যায়। ৩০ জুলাই সকালে বাদি ও সাক্ষীরা ভিকটিম লিয়াকত সরদারকে কয়ার বিল নামক স্থানে গুলিবিদ্ধ মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
লাশের ময়না তদন্ত শেষে বাদি ভিকটিমের লাশ নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। আসামীরা বাদির স্বামীর নিকট অবৈধ সুবিধা চেয়ে না পাওয়ায় হেফাজতে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগ অনুকুল পরিস্থিতি না থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী জিএম জাকির হায়দার গত ২১ জানুয়ারি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) আদালতের আদেশ পাওয়া হয়েছে।