বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন
আব্দুর রাজ্জাক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উত্তর কালিগঞ্জের তারালী চৌরাস্তা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেনা ও পুলিশ সদস্যদের কঠোর পদক্ষেপে প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে উভয়পক্ষের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শেখ আব্দুল আজিজসহ ৩ জন আহত হয়েছেন।
বর্তমানে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলের আশেপাশের ১ কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দীর্ঘদিন যাবত কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্যসচিব আব্দুল আলিম কুশুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ এবাদুল ইসলামকে আহ্বাবায়ক এবং ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বাবুকে সদস্যসচিব করে কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। যেটি নিয়ে দীর্ঘদিন চলেছে অন্তদন্ড।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার তারালী ইউনিয়ন বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিকে পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হযেছে বলে অভিযোগ করে রোববার তারালী বাজার এলাকায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি অংশ।
২৭ জানুয়ারি (সোমবার) উপজেলা বিএনপি’র আয়োজনে আবারো ডাক দেওয়া হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। বিকাল ৫ ঘটিকায় বিএনপি’র পাটি অফিস থেকে উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মী ও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বড় পরিসরে বিক্ষোভ সমাবেশের মিছিল নিয়ে বাস টার্মিনাল অভিমুখে আসেন তারা। এদিকে বাস টার্মিনাল সংলগ্ন তারালী চৌরাস্তা মোড় এলাকায় তারালী ইউনিয়ন বিএনপির নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে বিজয় মিছিলের আয়োজন করে। একপর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপজেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে তারালী চৌরাস্তা মোড় এলাকায় গেলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
এ সময় উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা খানবাহাদুর আহছানউল্লা সেতু সংলগ্ন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক সাইফুল ইসলামের অফিসের সামনে রাখা ৬ থেকে ৭টি মোটরসাইকেল এবং কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করে। মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডলের উপস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্য ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব শেখ আব্দুল আজিজ, নলতা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, উপজেলা সাইবার ফোর্সের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ, সাংবাদিক এস.এম আহম্মাদউল্লা বাচ্চু সহ কয়েকজন আহত হন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সাংবাদিক আবুল কালাম বিন আকবারের দুটি মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারমুখী ভঙ্গিতে গেলে নলতা ইউনিয়নের বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নিরাপদে নিয়ে আসেন তাকে। ও পরে তার মুঠোফোন ফেরত দিয়ে দেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত শেখ আব্দুল আজিজকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সন্ধ্যার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শহিদুল আলম আহত যুবদলের সদস্যসচিবকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট সংঘাত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত উপজেলা সদরের ফুলতলা মোড় থেকে বাসটার্মিনাল ও আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।
১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সংঘাতে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া আরো ২ থেকে ৩জন আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।