বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
এস এম মিজানুর রহমান, শ্যামনগর: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে প্লাস্টিক, সোয়াবিনের গাথ ও টায়ার। তার পাশাপাশি থাকছে দেশীয় কাঠ। অধিকাংশ ইটভাটা জনবসতি এলাকায় হওয়ায় এর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
নুরনগর ইউনিয়নের রামজীবনপুর এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই একটি ইটভাটা রয়েছে তার কালো ধোয়া প্রতিনিয়ত আমাদেরকে বিষাক্ত করে তুলেছে, আমাদের অনেক বন্ধুরা ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদিকে অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও রয়েছে নীরব। তবে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলা দেয়া এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনি খাতুন। প্রশাসনের দৌড় ঝাপে ইতিমধ্যে দুই একটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হলেও বর্তমানে রয়েছে সবাই বহাল তবিয়াতে। উপজেলার জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে উঠেছে এ সকল অবৈধ ইটভাটা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালক ডাঃ জিয়াউর রহমান বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্লাস্টিক ও টায়ার দিয়ে ইট পোড়ানো হলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এতে বৃদ্ধ এবং শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইটভাটা। এরমধ্যে ঝিকঝাক এবং সনাতনী পদ্ধতির ইট ভাটাও রয়েছে। এসব ইট ভাটার মধ্যে অধিকাংশের নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পরিবেশের ছাড়পত্রবিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোনো সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্সও নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা। এ কারণে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। সরজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ইট ভাটার সামনে কয়লা রাখা থাকলেও রাতে জ্বালানো হয় কাঠ, প্লাস্টিক সয়াবিনের গাঁথ ও টায়ার। জ্বালানি কাজে কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ইটভাটা মালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু, প্লাস্টিক, সয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার ব্যবহার করে তারা ইট পোড়াচ্ছেন। একটি ব্রিকসের ম্যানেজার জানান, প্রথমে ইটভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ইটভাটার ভেতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় প্লাস্টিক, তুষকাঠ ব্যবহার করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ কিছুটা কম হয়। একাধিক কৃষক বলেন, অবাধে কাঠ পোড়ানোয় একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বন অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে কমছে জমির উর্বরাশক্তি। প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে। ফসলি জমির উপরের অংশ কেটে ফেলে মাটি ইট ভাটায় আনা হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ধোঁয়া ও বালুকণার কারণে গাছপালা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।