অনলাইন ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাঁর করা বিধি-নিষেধ মেনে চলার জন্য। পৃথিবীতে যে মানুষ আল্লাহকে মেনে চলবে না তার জন্য অপেক্ষা করছে চির শাস্তির জায়গা জাহান্নাম। যেখানে সীমালঙ্গনকারীরা জ্বলবে অনন্তকাল ধরে। জানা যায়, জাহান্নামের উদ্বোধন করা হবে ৩ শ্রেণির মুসলিমদের দিয়ে। আর সেই ৩ শ্রেণির মুসলিমও কোন সাধারণ মুসলিম না, তারা হবেন আলেম, শহীদ ও দান খয়রাতকারী। কিন্তু কেন এমন হবে? কেন যাদের সবচেয়ে বেশি সম্মান পাবার কথা তারাই প্রথম জাহান্নামে প্রবেশ করবে?
কারা প্রথম জাহান্নামে যাবে এ নিয়ে সহীহ মুসলিমে রাসুল (স) এর একটি লম্বা হাদিস রয়েছে। আবু হোরায়রা (র) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, “কেয়ামতের দিন যাদের বিরুদ্ধে ফয়সালা হবে তাদের মধ্যে সর্ব প্রথম সেই ব্যক্তি থাকবে যে শহীদ হয়ে মারা গেছে। আল্লাহ তখন তাকে দেয়া নেয়ামতগুলো বর্ণনা করে জিজ্ঞেস করবেন এই নেয়ামত গুলো দিয়ে তুমি কি করেছ? লোকটি উত্তর দিবে, আল্লাহ আমি আপনার রাস্তায় যুদ্ধ করেছি যতক্ষন না আমি শহীদ হয়েছি।
তাঁর কথা শুনে আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তুমি যুদ্ধ করেছিলে ঠিকই কিন্তু আমার সন্তুষ্টির জন্য না, বরং এই জন্য যেন মানুষ তোমাকে বীর পুরুষ ভাবে। এবং মানুষ তা বলেছে। তাই এখন তোমার জন্য আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এর পর তাঁকে তাঁর মুখের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
এর পর ডাকা হবে একজন আলেমকে। যার ধর্মীয় জ্ঞান ছিলো এবং তিনি মানুষকে তা শিখাতেন পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আল্লাহ তখন তাকে দেয়া নেয়ামতগুলো বর্ণনা করে জিজ্ঞেস করবেন এই নেয়ামত গুলো দিয়ে তুমি কি করেছ? তখন সে উত্তর দিবে, “আল্লাহ আমি ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করেছি, মানুষকে তা শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কোরআন তেলাওয়াত করেছি।
তাঁর কথা শুনে আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তুমি ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করেছো, লোককে তা শিখিয়েছ এবং কোরআন তিলাওয়াত করেছ ঠিকই কিন্তু তা আমার জন্য নয় বরং এই জন্য করেছ যেন লোকে তোমাকে একজন বিজ্ঞ ও বড় আলেম ভাবে। এবং লোকে তা ভেবেছে। তাই এখন আর তোমার জন্য কিছু অবশিষ্ট নেই।” এর পর তাকেও তাঁর মুখের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
এর পর আনা হবে একজন ধনী ব্যাক্তিকে যে দান খয়রাত করতো। আল্লাহ তখন তাকে দেয়া নেয়ামতগুলো বর্ণনা করে জিজ্ঞেস করবেন এই নেয়ামত গুলো দিয়ে তুমি কি করেছ? তখন সে উত্তর দিবে, “আল্লাহ আপনি আমাকে যে ধন সম্পদ দিয়েছেন তা আমি আপনার রাস্তায় ব্যায় করেছি, মানুষের জন্য দান খয়রাত করেছি যেন আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন।
তাঁর কথা শুনে আল্লাহ বলবেন, “তুমি মিথ্যা কথা বলছো। তুমি দান-খয়রাত করেছ ঠিকই কিন্তু তা আমার জন্য না, বরং লোক দেখানোর জন্য। যেন মানুষ তোমাকে দানশীল ভাবে। এবং লোকে তা ভেবেছে। তাই এখন আর তোমার জন্য কিছু অবশিষ্ট নেই।” এর পর তাকেও তাঁর মুখের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
হাদিসটি থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, আমরা যে কোন ভালো কাজই করি না কেন, তাঁর পেছনে উদ্দেশ্য বা নিয়তটা খুবই জরুরি। যদি নিয়ত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি তাহলে আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। কিন্তু নিয়ত যদি হয় পার্থিব তাহলে তার ফল পৃথিবীতেই পাওয়া যাবে কিন্তু আখিরাতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মহান আল্লাহ আমাদের সুন্দর ও স্বচ্ছ নিয়তে চলার তৌফিক দিক।
Reff: Sahih Muslim; Book no. 20, Hadith no. 4688