সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
পটুয়াখালীতে কলেজছাত্রী ও নারী পুলিশ কনস্টেবলের লা’শ উদ্ধার টিপ ও চাদর পরিয়ে বহিরাগত যুবককে রুমে নিয়ে গেল জাবি ছাত্রী জবাবদিহি নিশ্চিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আয়োজনে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা একমুঠো খাবারের জন্য অসহায় বৃদ্ধা মায়ের হা’হা’কা’র শ্যামনগরের ভেটখালীতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  কালিগঞ্জের মথুরেশপুরে কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ চুকনগরে ভ্যানে ধাক্কা দিয়ে বাস খাদে! সাতক্ষীরার মধুমোল্লারডাংগীর মফিজুল নি’হ’ত শ্যামনগরে প্রতিপক্ষের হা’ম’লা’য় নারী-পুরুষসহ আ’হ’ত ৩ সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ মা’দ’ক’দ্রব্য ধ্বং’স করলো বিজিবি

ভালো নেই সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণ স্বামীহারা নারীরা!

এস এম মিজানুর রহমান, শ্যামনগর: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলবর্তী মুন্সিগঞ্জ এলাকার সুন্দরবন সংলগ্ন আলোচিত নারী মুখ সোনামনি। ভালোই চলছিল স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার। জীবিকার তাগিদে স্বামী নিয়মিত ছুটে চলেন সুন্দরবনে। হঠাৎ একদিন স্বামীকে জীবন দিতে হয় বাঘের আক্রমণে। স্বামীর মৃত্যুর পর এক মাসের শিশু সন্তানসহ শাশুড়ি তাড়িয়ে দেন সোনামনিকে। পরে দেবর বিয়ে করে তাকে।

একদিন বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় দ্বিতীয় স্বামীরও মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই ‘অপয়া’, ‘অলক্ষ্মী’, ‘স্বামীখেকো’ অপবাদ মাথায় নিয়েই চলছে সোনামনির জীবন।

আরেক ‘বাঘ-বিধবা’ বুলি দাশী। স্বামী অরুণ মণ্ডল সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন। স্বামীর মৃত্যুর তাকেই দায়ী করে নির্যাতন করতেন শাশুড়ি। এক পর্যায়ে স্বামীখেকো অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে।

কুসংস্কারেরই একটি প্রতিচ্ছবি ‘বাঘ-বিধবা’ অপবাদ। বিয়ে-জীবন-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। অথচ এ জন্য দায়ী করা হয় অসহায়-অবলা নিষ্পাপ স্ত্রীকে।

চব্বিশ শতকের ডিজিটাল যুগে এসেও বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তিদের স্ত্রীদের এমনই পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে সুন্দরবনের আশপাশের এলাকাগুলোতে। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। কথা হয়েছে কয়েকজন ‘বাঘ-বিধাবা’র সাথে। তারা বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে জীবিত থেকেও মৃতের মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

শুক্রবার সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার আলোচিত মুখ সোনামনির দুই স্বামীকে জীবন দিতে হয়েছে বাঘের আক্রমণে। সোনামনি বলেন, ১৯৯৯ সালে আমার স্বামীকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। সে কারণে কোলের এক মাস বয়সী সন্তানসহ আমার শাশুড়ি আমাকে তাড়িয়ে দেন। তখন আমাকে সন্তান নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। পরে আমার দেবর আমাকে বিয়ে করে। ২০০৩ সালে তাকেও বাঘে ধরে। এরপর থেকেই আমাকে ‘অপয়া’, ‘অলক্ষ্মী’, ‘স্বামীখেকো’ অপবাদ মাথায় নিয়ে থাকতে হয়। কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলেও খেতে দেয় সবার শেষে।’

আরেক ‘বাঘ-বিধবা’ বুলি দাশী বলেন, আমার স্বামী অরুণ মণ্ডল ২০০২ সালে সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন। এর জন্য আমাকেই দায়ী করে নির্যাতন করতে থাকেন শাশুড়ি। একপর্যায়ে বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেন। আমার বাবা মারা গেছে অনেক আগেই। তাই ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে উঠি। কিন্তু ভাইও তো গরিব, তাই নদীতে রেণুপোনা ও কাঁকড়া ধরে সংসার চালাতে শুরু করি। এভাবেই ছেলে-মেয়েদের বড় করেছি।

বুলি দাশী আরও বলেন, আমার মতো এমন অনেক মেয়ে আছে, যাদের স্বামী বাঘের হাতে মারা যাওয়ার পর তাদের অপয়া বলে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমার স্বামীর ছোট ভাইও বাঘের আক্রমণে মারা যায়। তার বউ দিপালীকেও বাপের বাড়ি তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

শাহিদা খাতুন নামে আরেক ‘বাঘ-বিধবা’ জানালেন, তাকেও তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে শ্বশুর বাড়ি থেকে। নদীতে জাল টেনে আর অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান তিনি। ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাঘের আক্রমণে মারা গেছে পাঁচ শতাধিক বনজীবী। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাঘের আক্রমণে কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ২০১৭ সালে তিনজন নিহত ও একজন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। আর সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক হাজার ৫০০ ‘বাঘ-বিধবা’ নারী রয়েছেন।

তবে সরকারি হিসাবে সুন্দরবনে বাঘের হামলায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা অনেক কম। কারণ হিসেবে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, মধু সংগ্রহ বা মাছ ধরার মতো কাজে যারা সুন্দরবনে যান, তাদের অনেকে সরকারি নিয়ম অনুসরণ করেন না। অনেকেই অন্যের পাস ব্যবহার করে প্রবেশ করেন সুন্দরবনে। তারা সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মারা গেলেও তাদের নাম সরকারি হিসাবে ওঠে না। বাঘের হামলায় নিহত হলে পারিবারকে এক লাখ টাকা ও আহত হলে চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেয়ার সরকারি নিয়ম আছে। কিন্তু অনেকেই অন্যের নামের পাস নিয়ে বনে যান। তাদের জন্য সরকারি কোনো সুবিধা নেই।

তবে ‘বাঘ-বিধবা’দের পরিস্থিতি খানিকটা বদলেছে বলে জানালেন স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্যা নিপা চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মানুষের শিক্ষার হার অনেক কম ছিল। আগে স্বামীকে বাঘে ধরলে তার দোষ স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হতো। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। এমন ঘটনার কথা এখন আর শোনা যায় না। বাঘ বিধবারা বর্তমানে ব্যাপকভাবে মানবতার জীবন যাপন করছেন, তারা সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্টটি শেয়ার করুন

©All rights reserved© SatkhiraVision.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com