গত শুক্রবার(৬ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা সদরের ধলবাড়িয়া শেখ শাহেদের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শিবপুর ইউনিয়নের গোদাঘাটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা থানায় একটি লিখিত এজাহার দিয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ‘বাঁশদাহ ইউনিয়নের কয়ারবিলে অবস্থিত নিবরাজ ব্রিকস নামে শেখ শাহেদের একটি ইট ভাটা আছে। তার ভাটা হতে ১ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ ইট ক্রয়ের জন্য ২০২০ সালে এককালীন ১০ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা শেখ শাহেদকে প্রদান করেন সাবিনা খাতুন। এরপর ভাটায় ইট পোড়ানোর পর সাবিনা খাতুন ইট আনতে গেলে শেখ শাহেদসহ ভাটা সংশ্লিষ্টরা ‘উন্নত মানের ইট তৈরী হয় নাই, পরবর্তীতে উন্নত মানের ইট তৈরী হলে ডেকে ইট দেবে বলে জানান।’ তাদের কথায় বিশ্বাস করে অপেক্ষা করতে থাকেন সাবিনা খাতুন। পরবর্তীতে তারা কয়েক দফায়, কয়েক সিজনে ইট তৈরী করে বিক্রয় করলেও সাবিনা খাতুনকে কোন ইট দেননি। তাদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তারা সাবিনা খাতুনের সাথে তালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শালিস বিচার হয়। কিন্তু শাহেদসহ তারা কোন শালিস বিচার মানেননি।
গত ৬ ডিসেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে প্রবাসী আপন ভাই মাসুম (২৭)কে সাথে নিয়ে শেখ সাহেদের বাড়িতে যেয়ে টাকা চাইলে শেখ সাহেদ সাবিনা খাতুনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করলে আগরদাঁড়ী ইউনিয়নের ধলবাড়িয়া গ্রামের শেখ আঃ মাজেদের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ সাহেদ (৩৬), আনছার আলীর ছেলে মাসুম (২৮), সাহেদের ড্রাইভার সজিব (২০), হেলালের ছেলে মুকুল (২০), শামসুর রহমানের ছেলে, সাবেক মেম্বর ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি হেলাল (৩৫), শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মাদকাশক্ত যুবলীগ কর্মী শাওন (২৫), নুরুল ইসলামের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম (২৪), নজরুল গাইনের ছেলে ও যুবলীগ নেতা সোহাগ (৩০), গদাঘাটা গ্রামের মৃত শাহজান আলীর ছেলে মোঃ মনি (৩০)সহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সাবিনা খাতুন ও তার ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে আটকে রাখেন।
ভূক্তভূগী সাবিনা খাতুন বলেন, পাওনা টাকা চাইতে যাওয়ায় আমাকে ও আমার প্রবাসী ভাইকে ব্যাপক মারপিট করে সন্ত্রাসী ধলবাড়িয়া গ্রামের শেখ সাহেদ, সাহেদের ড্রাইভার সজিব, মুকুল (২০), সাবেক মেম্বর ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি হেলাল (৩৫), শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের মাদকাশক্ত যুবলীগ কর্মী শাওন, মাহমুদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা সোহাগ, গদাঘাটা গ্রামের মনি (৩০)সহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন। তারা আমার কাপড়-চোপর খুলে ফেলে শ্লীলতাহানি ঘটায়। তাদের মারপিটের শিকার হয়ে আমরা শেখ শাহেদের ঘরে যেয়ে দরজা আটকে দেই।এরপর সাবেক মেম্বর ও যুবলীগ নেতা হেলাল এসে আমাদের বুঝিয়ে দরজা খুলিয়ে বাইরে আনার চেষ্টা করেন। সংবাদ পেয়ে বাঁশদহা ইউপি মেম্বর মোর্শেদুল ও আমার মামা কাশেম শেখ শাহদের বাড়িতে আসলে তাদের উপস্থিতিতে যুবলীগ নেতা হেলাল আবারও দরজা খুলতে বললে আমরা দরজা খুলি। তারপর বাইরে আসার পর তারা আবার আমাদের মারপিট করে আটকে রাখে। আমার ভাইয়ের নাকে ঘুঁসি মেরে হাড় হাড় ভেঙে দিয়েছে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
বাঁশদহা ইউপি মেম্বর মোর্শেদুল বলেন, ‘আমরা যাওয়ার পর সাবিনা ও তার ভাই বাইরে চলে আসে। এরপর হঠাৎ শেখ সাহেদসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে সাবিনা ও তার ভাইকে ব্যাপক মারপিট করে। পরে সদর থানার এসআই শফিক ভাইসহ পুলিশ সদস্যরা সংবাদ পেয়ে তাদের উদ্ধার করে।’
এ ব্যাপারে জানার জন্য অভিযুক্ত শেখ শাহেদের কাছে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর যুবলীগ নেতা সোহাগ, যুবলীগ কর্মী শাওনসহ কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ও মাদকাশক্ত যুবককে নিয়ে সন্ত্রাসী শেখ শাহেদ একটি গ্যাং বাহিনী গঠন করেছে। এখন পর্যন্ত তারা প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে মারপিট করেছে। শিয়ালডাঙ্গার নবকুমারের বাড়িসহ প্রায় ডজনখানেক বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করেছে। তার মারপিট থেকে বাদ পড়েনি সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। তাদের তান্ডবে অতিষ্ঠ আবাদেরহাটসহ আগরদাঁড়ী ইউনিয়নবাসী। পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সন্ত্রাসী শেখ সাহেদ এখন বিএনপির কতিপয় নেতার সাথে মিশে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে। অথচ সে নিজেই যুবলীগ ছাত্রলীগের ছেলেদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছে। এই শাহেদ সবসময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চলাচল করে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শেখ শাহেদের এই সন্ত্রাসী বাহিনী অপকর্ম করছে আর দোষ হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির। শেখ শাহেদসহ এই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় না আনলে আমাদের এলাকায় আরো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। আমরা শেখ সাহেদগংকে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি।