Spread the love

অনলাইন ডেস্ক: সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজিমউদ্দীনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলায়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশের প্রেক্ষিতে তদন্তকাজ শুরু করেছেন সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস। অভিযোগের তদন্ত পূর্বক কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন সাতক্ষীরা পৌরবাসি।

সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নাজিমউদ্দীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সাতক্ষীরা পৌরসভায় যোগদান করেন ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে। এর আগে কুড়িগ্রামের আরডিসি ও কক্সবাজারের এসিল্যান্ড থাকাকালে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য তিনি হন ব্যাপক সমালোচিত। বিশেষ করে কক্সবাজারের এসিল্যান্ড থাকাকালে বয়স্ক একজন ব্যক্তিকে কান ধরে টেনে লাঞ্চিত করে দেশব্যাপী ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েন এ কর্মকর্তা।

সবশেষ জানা যায়, অন্তবর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সরিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর তাকে কিশোরগঞ্জের ইটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এনিয়োগ নিয়েও বিতর্ক শুরু হলে তার চাকরি বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিবাসিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাজিমউদ্দীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সাতক্ষীরা পৌরসভায় যোগদানের পর থেকে শুরু হয়ে যায় তার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চলতি বছরের ১৩ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে ভোলা পৌরসভায় বদলীর আদেশ দেন। তবে সে আদেশ অগ্রাহ্য করে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বহাল তবিয়তে সাতক্ষীরা পৌরসভায় অফিস করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরা পৌরসভায় যোগদান করেই পানি সরবরাহ বিভাগে মাস্টাররোলের ২৭ কর্মচারিকে কোনো কারণ ছাড়াই বেতন বন্ধ করে দেন নাজিমউদ্দীন। এসকল অভিযোগের জন্য নাজিমউদ্দীনকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এবিষয়ে পানি বিভাগের কর্মচারি বাপী আহমেদ জানান, আমরা পানিবিভাগের মাস্টাররোলের কর্মচারি। সিইও নাজিম আসার পরের মাস থেকে কারণ ছাড়াই আমাদের বেতন বন্ধ করে দেয়। সেই বেতন চাইতে গেলে ক্রসফায়ারে গুলি করে হত্যা করে মারার হুমকি দেয়। সেই থেকে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। তিনি প্রচন্ড দুর্নীতিবাজ । আমরা তার বরখাস্ত দাবি করছি।

পৌরসভায় চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৭ ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন নাজিমউদ্দীন। ২বছর পার হলেও কারো চাকরি দেননি তিনি, টাকাও ফেরত দেননি।

এপ্রসঙ্গে সাতক্ষীরা পৌরসভার মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিরাজ হোসেন জানান, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিল সিইও নাজিমউদ্দীন। স্ইে টাকা ফেরতও দেয়নি, চাকরি স্থায়ীকরণও করেনি।

নাজিমউদ্দীনের সময়ে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়েনি পৌরসভায়। রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের জন্যও তাকে দিতে হয়েছে মোটা অংকের ঘুষ।

এবিষয়ে কোরাইশী ফুড পার্কের স্বত্বাধিকারী আনিছুর রহমান কোরাইশী বলেন, রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের জন্য যারপরনাই হয়রানি করেছিলেন নাজিম ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান। অগত্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স ছাড় করা হয়।

বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিকে চেয়ারে বসতে দেননি নাজিম। কাউন্সিলরদের হাত করে ফিরোজ হাসানকে বানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। এরপর থেকে নাজিমউদ্দীন ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন।

সেবাগ্রহীতাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা ঘুষ। তাকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনসহ একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে সাতক্ষীরায়। তার বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছে। কিন্তু এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তে রাজসিক কায়দায় চাকরি করেছেন সাতক্ষীরা পৌরসভায়।

এদিকে ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার সাবেক মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি স্থানীয় সরকার বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে,ভুয়া প্রকল্পের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা আত্মসাৎ, আর্থিক অনুদানের নামে ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে পৌরসভার ১৪ জন কর্মচারী নিয়োগসহ ৯টি অভিযোগ।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে আমি বিভিন্ন ছলে হয়রানি হয়েছি। সিইও নাজিমউদ্দীন আর ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ পেশিশক্তি দেখিয়ে আমাকে পৌরসভায় আসতে দেয়নি। শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে একবছরের মধ্যে তারা ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছে। ঠিকাদাররা স্টেটমেন্ট দিয়েছে, এসব প্রকল্পএর কাজ তারা করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজিমউদ্দীন ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসানের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়রের আনীত অভিযোগ তদন্ত করে মতামতসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রতিবেদন দিতে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। গত ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রলায়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মন্তব্যসহ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনা মোতাবেক তদন্তকাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস।

তিনি বলেন, পৌরসভার সিইও ও পৌর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয় সরকার বিভাগে দেওয়া হয়েছে। সেটার তদন্তভার আমার ওপর। তদন্ত শুরু করেছি। যতদ্রুত সম্ভব মন্তব্যসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *