Spread the love

অনলাইন ডেস্ক: খুলনার পাইকগাছায় নার্সারিগুলোতে বেড়েছে তালের চারার বাণিজ্যিক উৎপাদন। চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে স্থানীয় নার্সারী মালিকরা অন্তত ২ লাখ চারা তৈরির লক্ষ নিয়ে বেড পরিচর্যা করছেন।

তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের ভূমিকা অপরিহার্য। পরিবেশ বান্ধব গাছটি বজ্রপাত নিরোধক ও ভূমির ক্ষয়রোধে বরাবরই বিশেষ ভূমিকা রাখে। পরিবেশবান্ধব বহুতল ভবন নির্মাণে কড়ে-বর্গা হিসেবে তালগাছের জুড়িমেলা ভার। বিভিন্ন সময় সরকারী, বে-সরকারী পর্যায়ে তালগাছের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচী এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে তালগাছ রোপনে দারুণভাবে সাড়া সাগিয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, পাইকগাছার সততা নার্সারি মৌসুমের শুরুতে প্রায় ৮০ হাজার তালের চারা তৈরির লক্ষমাত্রা নিয়ে পরিচর্যা চালাচ্ছে। স্থানীয় আরেক মায়ের দোয়া নার্সারীতে প্রায় ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, বর্তমানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ রক্ষায় তালগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবছর সরকারিভাবে তারা রাস্তার পাশে ও পতিত জমির আইলে তালগাছের চারা রোপন করে আসছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে তালগাছ রোপনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কৃষিবিভাগ দীর্ঘ দিন থেকে কাজ করে আসছে। জনসচেতনতায় তৈরি হয়েছে এর চারার চাহিদা। ফলে স্থানীয় নার্সারীগুলো বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদনের পাশাপাশি এখন তালের চারা উৎপাদনে মনোনিবেশ করেছে।

স্থানীয় কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার মুঠোফোনে জানান, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এখন প্রচুর পরিমাণে তাল ও নারিকেল গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। প্রতি বছর এর হার বেড়েই চলেছে।

পাইকগাছা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল গাছ ভাল হয়। বিশেষ করে লবণাক্ত এলাকায় তালগাছ খুব ভাল হয়। এক প্রকার কোনরকম পরিচর্যা ছাড়াই অবহেলা ও তালের চারা বেড়ে ওঠে। তবে উঁচু ও ভারী মাটি তাল গাছের জন্য উপযোগী।

তিনি বলেন, এদেশে বাগান হিসিবে এককভাবে তাল ফসলের আবাদ নেই।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগস্ট মাস থেকে তাল পাকা শুরু হয় এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। তবে ভালো চারা তৈরির জন্য ভাল মানের তালবীজ সংগ্রহ করতে নির্বাচিত মাতৃগাছ হতে বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

কৃষি বিভাগ ও নার্সারী সূত্র জানায়, পাইকগাছার নার্সারিগুলোতে তালের চারা তৈরির জন্য এ বছর অন্তত দেড় লাখ তালবীজ বপন করা হয়েছে। মাটির ২ ফুট উঁচু বেড তৈরি করে এর বীজ বপন করা হয়। অংকুরিত বীজ মাটির নিচের দিকে বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে মাটি খুঁড়ে বীজপত্র তুলে চটের তৈরি পলিব্যাগে রোপণ করে চারা তৈরির পরিচর্যা শুরু হয়েছে।

সততা নার্সারির মালিক অশোক কুমার পাল জানান, তিনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে তালের চারা উৎপদন করছেন। গত বছর দেড় লাখ তালবীজ থেকে ৮০ হাজার তালের অংকুরিত বীজ রোপনসহ তার আনুসঙ্গিক খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এখনো চারা তৈরির পরিচর্যার কাজ চলছে।

মায়ের দোয়া নার্সারির মালিক ইউছুপ গাজী জানান, প্রায় ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ২৫ হাজার চারা টিকতে পারে, সব আঁটি (বীজ) থেকে চারা হয় না। চারা তৈরি করতে তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। উৎপাদিত তালের চারার ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারি, এনজিও ও সরকারিভাবে তালের চারা ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাছাড়া উৎপাদিত তালের চারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *