এসভি ডেস্ক: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের কোটার মোড়ে যাত্রীবাহি পরিবহনে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুটি প্রাইভেটকার, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারসহ পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সোনা পাচারকারি শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোঃ আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানী শেষে জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, দুটি প্রাইভেটকারে করে একদল ডাকাত সাতক্ষীরা- নাভারন সড়কের কোটার মোড় এলাকায় যাত্রীবাহি পরিবহনে ডাকাতি করবে এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে গত বছরের ৬ মার্চ রাত দুটোর দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। প্রাইভেটকারে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা কোটার মোড় এলাকায় আসা মাত্র পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। ৫ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গাড়িতে অবস্থানকারি মিজানুর রহমান নামে এক ডাকাত দলের সদস্য হাতের তালুতে গুলিবিদ্ধ হন।
এ সময় পুলিশ ছয়জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। ডাকাত দুলের সদস্যদের ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেটকার থেকে পুলিশ একটি বিদেশী পিস্তল, দুই রাউ- গুলি, চারটি বাঁশের লাঠি ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক অনিল মুখার্জী বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার হাজির আলী গ্রামের মোঃ বসিরের ছেলে হুমায়ুন কবীর, একই জেলার কোতোয়ালি থানার মোল্লাপাড়া গ্রামের ফজর আলী উকিলের ছেলে শহীদুল ইসলাম, একই গ্রামের ধনা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান, শার্শা থানার বসন্তপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, একই গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে আবুল কালাম, সাতক্ষীরা শহরের মধ্য কাটিয়ার আব্দুল হামিদের ছেলে শেখ শহীদুজ্জামান প্রিন্সসহ যশোরের শার্মা থানাধীন সেতাই গ্রামের আব্দুল গণি বিশ্বাসের ছেলে কবীর বিশ্বাস ও সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ি কাম সোনা পাচারকারি শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের নাম উল্লেখ করে কলারোয়া থানায় অস্ত্র আইনে ও সরকারি কাজে বাধা এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় (জিআর-৭৫/২৩) মামলা দায়ের করেন। গুলিবিদ্ধ মিজানকে প্রথমে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালিন কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) গত বছরের ১৩ জুন এজাহারে উল্লেখিত আটজনের নামসহ মোঃ আব্দুস সামাদের নাম উল্লেখ করে আদালতে অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান জানান, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মামলা বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার ছিল ওই মামলার ধার্য দিন। শেখ শফিউল্লাহকে ওই মামলায় হাজির করিয়ে জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক উভয়পক্ষের শুনানী শেষে শফিউল্লাহের জামিন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সকল আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্তকারি কর্মকর্তার অস্ত্র আইনের ১৯(এফ) ধারায় ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(ডি) ধারায় আনা অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে তা বিচারের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাতক্ষীরা জজ কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম শাহ আলম ও অ্যাড. আসাদুৃজ্জামান।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, শেখ শফিউল্লাহ এর জামিন আবেদন খারিজ করেছেন জেলা ও দায়রা জজ।