নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ জন আউট সোর্সিং কর্মীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাঁটাইসহ একাধিক দূর্ণীতি ঘটনায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আগামীকাল বুধবার (১০ আগস্ট) সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যালয়ে অভিযুক্ত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রুহুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ তদন্ত করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টীম।
এর আগে গত ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব (পার) মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ( স্মারক নং: ২২ ৫৯.০০.০০০.১০৮.৯৯.০০১.২২-৬৪) তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসময় তদন্তকাজের সমর্থনে সাক্ষী ও তথ্য প্রমাণসহ স্বশরীরে উপস্থিত থাকার জন্য ওই স্মারক পত্রের মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে তদন্ত কাজ ব্যাহত করাসহ তদন্তে প্রভাব সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন অভিযুক্ত ওই দুই চিকিৎসক। সামেক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বহিরাগতদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। গুঞ্জন উঠেছে যারা ওই দুই চিকিৎসকের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতি সম্পর্কে জানেন তাদের সামেক হাসপাতালে উপস্থিতি ঠেকাতে ওই বহিরাগতদের ব্যবহার করা হবে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২ জন আউট সোর্সিং কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু, ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ রুহুল কুদ্দুছ ২০২০ সালের নিয়োগকৃত ২২ জনের মধ্যে ৬ জনের নিয়োগ ইচ্ছামত বাতিল করে নতুন ১১ জনসহ ৩৩ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন।
আর এঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত ২৬ মে ভূক্তভোগিদের পক্ষে মেহেদী হাসান বাদি হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন (রিট পিটিশন: ৬৩০৩/২০২২)। এর একপর্যায়ে গত ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম ও মহিউদ্দীন শামিম এক আদেশে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক ইচ্ছামত ছাঁটাই করা আউট সোর্সিং কর্মীদের পূর্ণবহাল পূর্বক চার সপ্তাহের ভিতরে নোটিশ বোর্ডে তালিকাভূক্তির নির্দেশ দিলেও আদালতের শোকজের কোন জবাব দেননি অধ্যক্ষ ডা. মোঃ রুহুল কুদ্দুস।
তবে খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ওই ৬ আউটসোর্সিং কর্মীকে ছাঁটাই করার নৈপথ্যে ছিল স্বজনপ্রীতি। অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুসের সম্মতিতে আউট সোর্সিং নিয়োগ বোর্ডের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক কামরুজ্জামান তার তিন আত্মীয় শেখ সুজন, শেখ বিল্লাল ও শেখ সজীবকে নিয়োগ দেন। আর ছাঁটাই হওয়া অপর তিন আউটসোর্সিং কর্মীদের স্থলে অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস তার তিন নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সামেক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকরা জানান, অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে রুহুল কুদ্দুসের অনিয়ম দূর্নীতি দ্বি-গুণহারে বৃদ্ধি পেলেও অজানা কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
তারা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বিএনপি পন্থী ডা. রুহুল কুদ্দুস ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি কোয়ার্টারে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও অনিয়মিত শ্রমিকদের কোয়ার্টার ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে তার ড্রাইভার লিয়াকত একজন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী অথচ কোন রকম ভাড়া না দিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে থাকেন বছরের পর বছর। কোন আবেদনপত্র ছাড়া এবং কোন নিয়ম না মেনেই অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুসের নির্দেশে একাধিক কোয়ার্টার দখলে রেখেছেন তিনি।
তারা আরও বলেন, অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুস হাসপাতালের বিভিন্ন ক্রয় কমিটি ও টেন্ডার যাচাই-বাচাই সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হওয়ায় মালামাল ক্রয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ছাত্র কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দ, স্বেচ্ছাসেবকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে। আর তার এ নিয়মবহির্ভূত অনিয়মে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন অধ্যাপক কামরুজ্জামান।
এব্যাপারে সদ্য চাকরি হারানো আউট সোর্সিং কর্মীরা বলেন, হাসপাতালের ৬ জন আউট সোর্সিং কর্মীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাঁটাইসহ একাধিক দূর্নীতির ঘটনায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এই তদন্তে আমরা নিরাপত্তাহীনতার ভিতরে রয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক পত্রে আমাদের স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার কথা বলেছে। তবে দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ রহুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক কামরুজ্জামান হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আমাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন। অবাঞ্চিত ঘোষণার কারণ হিসেবে তারা বলেন, আমরা কয়েকজন হাসপাতালে যায়। তবে হাসপাতালের আনসার সদস্যরা আমাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেননি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক কামরুজ্জামান আনসার সদস্যদের লিখিতভাবে নির্দেশনা দিছেন যাতে আমরা কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারি।
এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে তারা আরও বলেন, আমরা ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা: রুহুল কুদ্দুস ও অধ্যাপক কামরুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।