Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চরবালিথা গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ কাজকে বিতর্কিত করতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা নিজেরাই সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে অথচ তারাই সরকারী ওই প্রকল্পকে বাঁধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন মহলে নানা কেচ্ছা কাহিনী শুনিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া ওই এলাকার একটি মহল ওই জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকা। সরকার ওই জমিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ও মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ করে দিলে স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেওয়ার নামে যে টাকা ওই মহল নিয়েছে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে এমন আশঙ্কায় তারা কিছু ভূমিহীনদের সাথে নিয়ে নানা পরিকল্পনা আটছেন।

সরেজমিনে চরবালিথা এলাকায় যেয়ে জানা যায়, মুজিব বর্ষে গৃহনির্মাণ প্রকল্পে জন্য চরবালিথা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে তিন একর জায়গা নির্ধারণ করে উপজেলা প্রশাসন। ওই জমিতে ৮৪ টি ঘর নির্মাণ করা হবে। তবে জায়গাটি নিচু হওয়ায় মাটি ভরাট করে উচু করে ঘর নির্মাণ করা হলে সুবিধা হবে। এজন্য ইতিমধ্যে ওই জমিতে মাটি ভরাট শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।

মাটি ভরাট শুরু হওয়ামাত্রই গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায় স্থানীয় জোহর আলী গাজীর ছেলে গ্রাম্য ডাক্তার নামধারী ভূমিহীন নেতা আব্দুল মুজিদ, স্থানীয় রফিকুলসহ কয়েকজন ভূমিহীন নেতার। কারণ আব্দুল মুজিদ ও তার সহযোগীরা ওই জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেওয়ার নাম করে ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলে টাকা দেওয়া ভূমিহীনরা টাকা ফেরত চাইছেন এজন্য আব্দুল মুজিদ ও তার সহয়োগীরা ওই প্রকল্প বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

স্থানীয় ভূমিহীন খায়রুন্নেসা বলেন, ‘আমি এই জমিতে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছি। প্রতিবছর ডিসিআরের কথঅ বলে আব্দুল মুজিদ আমার কাছে থেকে ১০০০, ২ হাজার, ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে মাস ছয়েক আগে তিনি এই জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেবে বলে ৩০ হাজার টাকা দিতে বলে। আমি অনেক কষ্টে তার হাতে ৩০ হাজার টাকা দেই। এরপর মাসখানেক আগে আবার এসে ১ হাজার টাকা চাইলে আমি সেই টাকাও দেই। এখনও আমার জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়নি। এখন শুনছি মুজিদ সেই টাকা নিজে হজম করে ফেলেছে। এখন সরকার এখানে ঘর বানাচ্ছে। মুজিদের কাছে এখন টাকা চাইলে টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন। আমাদের টাকা আমরা ফেরত চায়।’

আব্দুল মুজিদের কথায় বিশ্বাস করে স্থানীয় ভূমিহীন সুফিয়া খাতুন ১৫ হাজার, শাকিলা ৩২ হাজার, আমিরন ৩০ হাজার, জাহেদা ২১ হাজারসহ প্রায় ৩০ জন ভূমিহীন জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের আশায় বিভিন্ন ধাপে কয়েক লাখ টাকা আব্দুল মুজিদকে দিয়েছেন।

স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিন যাবত আব্দুল মুজিদ, রফিকুলসহ কয়েকজন বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন যে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে সরকার ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করছেন। তবে এখানে কোন ভূমিহীনকে উচ্ছেদ করে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছেনা। কয়েকজন ভূমিহীন এই জমিতে ধান রোপন করেছিলেন। সেই ধানের উপর মাটি ফেলানো হয়েছে। তবে ধান লাগানোর আগে নায়েব ধান রোপন করতে নিষেধ করেছিল কিন্তু আব্দুল মুজিদের কুপরামর্শে কয়েকজন ভূমিহীন এখানে ধান রোপন করে। আব্দুল মুজিদ আমাদের টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা শুরু করেছেন।

কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বর জাহিদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে এই মাটি ভরাটের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই কারণে আমি মাটি ভরাট করছি। আমি প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজের সভাপতি। এর বাইরে আমার কিছুই বলার নেই।’

বন্দোবস্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে টাকা নিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে অভিযুক্ত আব্দুল মুজিদ বলেন, ‘আমি ডিসিআর বা বন্দোবস্ত করে দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে ১ টাকাও নেই নি। যে টাকা তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে সেটি আমার পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছি।’ এছাড়া তিনি বলেন, ‘আমাদের রোপন করা ধানের উপর মাটি দিয়েছে বলে আমাদের খারাপ লেগেছে। সরকারের এই কাজে প্রতিবন্ধকতা হয় এমন কোন কাজ আমরা করবো না।’

কুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কান্তিলাল সরকার বলেন, ‘আমি ১ মাস আগে কুলিয়া ভ’মি অফিসে এসেছি। এ কারণে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। তবে ডিসিআর এর নাম করে যদি কেউ টাকা নেয় তবে লিখিত অভিযোগ পেলে এসিল্যান্ডের নির্দেশে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ওই স্থানে সরকারী নির্দেশনা মেনেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করা হবে। কারো অপতৎপরতা ওই কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবেনা।’

By S V

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *