Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি: নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পার হলেও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫ ভাগ। ভবন নির্মাণের জন্য মাত্র কয়েকটি পিলারের রড বসিয়ে উধাও হয়ে গেছে ঠিকাদার। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ওই স্কুলে পড়ুয়া শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। এতদিনেও ভবন নির্মাণে না হওয়ায় সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ঠরা।

সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে স্থানীয় প্রয়াত মার্জন আলী ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালেব বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো এই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করে সরকার। এর পর টিনের ছাউনির ঘরে ক্লাস চলতে থাকে বিদ্যালয়টির। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের একতলা ভবন নির্মাণ হয়। এরপর ২০১৩ সালে ওই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে গেলে সেটি পরত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য বিদ্যমান জরাজীর্ণ ভবনটি অপসারণ করে শুরু হয় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য ইট, বালি, রড, পাথর নিয়ে আসে ঠিকাদার। মাসখানেক কাজ করে পিলারের গর্ত খুড়ে কয়েকটি পিলার তৈরীর জন্য রড বাঁধে। এরপর হতে বিভিন্ন অজুহাতে আর কাজ করেনি ঠিকাদার। ফলে কয়েকটি জায়গায় এখনও বড়বড় গর্ত বিদ্যমান। রডসহ পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী বৃষ্টিতে ভিজে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নির্মাণকালীন সময়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয় অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ। সেই থেকে ওই অস্থায়ী শ্রেণি কক্ষেই চলছে পাঠদান। শ্রেণীকক্ষের মেঝের কার্পেতে বসেই ক্লাস করতে হচ্ছে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের। আর পাশের একটি আটোসাটো রুমে বসছেন শিক্ষকরা। ফলে বর্ষার সময় টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ ব্যাঘাত ঘটে ক্লাসের। বেড়ার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির কণা প্রবেশ করে। এছাড়া শীতের সময় মেঝেতে ঠান্ডা লাগায় নিয়মিত ক্লাস করতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে চিন্তায় আছেন শিক্ষকরা।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন তৈরীর শুরু হতে আমরা এই টিনশেডের রুমে ক্লাস করাচ্ছি। এতে বাচ্চাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া যত্রতত্র মালামাল ফেলে রাখার কারণে বাচ্চারা নিরাপদেও চলাচল করতে পারছেনা। স্কুলে এসেই তাদের ক্লাসরুমে একরকম বন্দি হয়ে থাকতে হয়। আর বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েও আমরা বেশ চিন্তায় আছি।’ 

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর মাত্র ৫ ভাগ কাজ করা হয়েছে। একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আমাদের কথায় ভ্রুক্ষেপ করছেন না।

আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৫ টাকা ব্যয়ে খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির দায়িত্ব পান শ্যামনগরের শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেন। নির্মাণাধীন ভবনের কাজ চলতি বছরের ৩ জুন শেষ হওয়ার কথা। তবে আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেনের তদারকির অভাবে এবং ঠিকাদার মুকুল হোসেনের গাফিলতির কারণে এখন পর্যন্ত ভবন নির্মাণের ৫ ভাগ কাজও শেষ হয়নি হয়নি। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সাইটে কাজ করি। করোনার কারণে সেখানের বিল আটকে আছে। ফলে আর্থিক সংকটের কারণে আমরা কাজ করতে পারছিনা। তবে এ কারণে ওই বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শেষ করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’

আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে তলব করেছি। একাধিকবার তাকে চিঠি দিয়েছি। তবে তিনি টালবাহানা করছেন। আমাদেও কোন গাফিলতি নেই। সবদিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আশা করছি অতিদ্রæত ওই বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদার যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করে এবং পরিত্যাক্ত মালামাল সরিয়ে নেয় সে জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বিদ্যালয়টির বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে অবহিত করেছেন। নির্মাণ কাজ শেষ করতে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ গাফিলতি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

By S V

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *