Spread the love

দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটা সদর ইউনিয়নে চাঞ্চল্যকর জুয়েল হত্যাকান্ডের ২ দিন অতিবাহিত হলেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে ক্লু উদঘাটনে বিরামহীন তদন্ত করছে পুলিশ। এছাড়া হত্যার আগে জুয়েলের সাথে দেখা করতে আসা দুই বাইক আরোহী, হত্যাকান্ডে জড়িতদের সনাক্ত ও জুয়েলের মোবাইল ফোন এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে পুলিশের কয়েকটি ইউনিট।

ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা অনেকটা চতুরতার সাথে হত্যা করেছে জুয়েলকে। এজন্য মোটিভ উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।

তবে আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ, হত্যার স্থান ও উদ্ধারকৃত আলামত, নিহতের পরিবারের সদস্য ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং জুয়েলের মোবাইল কললিস্ট অনুসরণ করে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

এছাড়া পূর্ব শত্রুতা, আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক জীবনযাপন, অর্থ-সম্পদ, মাদক কিংবা নারী ঘটিত কোন কারণে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে কিনা তাও সুক্ষ্ণভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বুধবার রাত সোয়া ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার ভিতরে দেবহাটা থানা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়ীতে দূর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আশিক হাসান জুয়েল (৩২)।

তিনি দেবহাটা সদরের মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে। হত্যার আগে বাড়ির সামনের পুকুরের সিড়িতে বসে ছিলেন জুয়েল। সেসময়ে তার খোঁজে আসে অজ্ঞাত দুজন বাইক আরোহী। অন্ধকারে জুয়েলের মায়ের কাছ থেকে অবস্থান জিজ্ঞেস করে পুকুর পাড়ে জুয়েলের সাথে দেখা করতে যান বাইক আরোহীরা।

ঘটনার বিশ্লেষণে মুলত ওই সময়েই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত এবং হত্যায় ওই দুজন বাইক আরোহীর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে দৃঢ় সন্দেহ পুলিশের।

জুয়েলের স্বজনরা জানান, ৯/১০ বছর আগে জুয়েলের সাথে বিয়ে হয় শাঁখরা কোমরপুর গ্রামের আশুরা’র। আরিয়ান নামের ৭ বছরের একটি শিশুপুত্র রয়েছে তাদের। বছর দেড়েক আগে তাদের দাম্পত্য জীবনে ভাঙন ধরলে ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় আশুরা। প্রায় ৮ মাস আগে তাদের ডিভোর্স হয়। তারপর আরিয়ান মাকে ছেড়ে বাবা জুয়েলের কাছে চলে আসে।

ছেলে ও বৃদ্ধ মা চায়না বেগমকে নিয়ে বাড়িতে থাকতো জুয়েল। তার বড়ভাই আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান রাজু চাকুরী ও ব্যবসার সুবাদে থাকেন ঢাকায়। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রায় একশো বিঘা জমি ও অঢেল অর্থ-সম্পদ থাকায় সেগুলো দেখাশুনা ছাড়া তেমন কোন নির্দিষ্ট পেশা ছিলনা জুয়েলের। একাকিত্ব ঘোচাতে নিয়মিত সন্ধ্যার পর পুকুরের সিড়িতে অথবা বাড়ির আঙিনায় থাকা নিজের বিলাস বহুল এসি প্রাইভেট কারের মধ্যে বসে সময় কাটাতো সে।

সেদিনও গাছপালা ও ঝোপঝাড়ে বেষ্টিত নির্জন বাড়িটির সামনের পুকুরের সিড়িতে বসে থাকাবস্থায় জুয়েলের মাথায় হাতুড়ি জাতীয় ভারী বস্তু ও নাকের উপরিভাগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর মৃত্যু নিশ্চিত হলে হত্যাকারীরা সেখান থেকে মাটি দিয়ে টেনে নিয়ে কয়েক গজ দূরে বাড়ির পশ্চিম পাশের আরেকটি পুকুরে জুয়েলের লাশটি ফেলে রেখে যায় বলে ধারনা করছেন স্বজনরা।

এদিকে জুয়েলকে হত্যার পর থেকে শিশু আরিয়ান অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে দুঃচিন্তায় দিশেহারা পরিবারের অন্যান্যরা। আদরের বাবা যে আর ফিরে আসবেনা তা এখনো জানেনা আরিয়ান। তার ধারনা জুয়েল হাসপাতালে আছেন, সুস্থ্য হয়ে আবার বাবা ফিরে আসবে তার কাছে।

বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জুয়েলের দাফন সম্পন্ন করেন স্বজনরা। দাফন শেষে রাতেই জুয়েলে বড় ভাই আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান রাজু বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামী করে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় দেবহাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-০১।

এদিকে মামলা দায়েরের আগে ও পরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জুয়েলের মা-ভাই সহ নিয়মিত সংস্পর্শে থাকা পাশ্ববর্তী এলাকার ইমরোজ আলী, কাজের ছেলে আলিম, সম্প্রতি কাজ ছেড়ে যাওয়া গৃহপরিচারিকা রওশন আরা, শাঁখরা কোমরপুরের মিনহাজ, নাংলা নওয়াপাড়ার হারুন বিশ্বাসসহ কমপক্ষে দশ জনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ বলেন, পুলিশের একাধিক ইউনিট হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে বিরামহীন ভাবে কাজ করছে। বেশ কিছু বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে দ্রুততার সাথে তদন্ত সম্পন্ন করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *